
শিল্পী আক্তার রংপুর ব্যুরো :- জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে নেসকো কর্তৃক হয়রানীমুলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের দাবিতে আজ সকাল ১১.৩০ টায় রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নিউক্রস রোডস্থ সুমি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ।এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নীপেন্দ্রনাথ রায়, এবিএম মসিউর রহমান, আব্দুল হামিদ বাবু, মাহফুজার হোসেন,মেহেদী হাসান তরুন,রেদোয়ান ফেরদৌস, সুবাস বর্মন বেলায়েত হোসেন বাবু প্রমুখ ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়-বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানী (নেসকো) রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়ী, দোকানপাট, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার সংযোগ কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশেষ করে বাসা-বাড়িতে গ্রাহকদের আপত্তি সত্ত্বেও নানা কৌশলে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ অব্যাহত রেখেছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রিপেইড মিটার স্থাপনে জবরদস্তির অভিযোগও রয়েছে। ইতিপূর্বে গ্রাহকদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নেসকো কর্তৃপক্ষকে বাধ্যতামূলকভাবে বাসা-বাড়ি প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাসা-বাড়িতে কোনো গ্রাহক যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রিপেইড মিটার সংযোগ নিতে চায় তবেই সেখানে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা যাবে। এক্ষেত্রে কোনো গ্রাহককে বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু বর্তমানে নেসকো কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশনা অমান্য করে গ্রাহকদের আপত্তি স্বত্তেও প্রিপেইড মিটার স্থাপনে নানামুখী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পূর্বে নেসকো কর্তৃপক্ষের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মতামত গ্রহণ কিংবা একটি গণশুনানীর আয়োজন করা উচিৎ ছিল। কিন্তু জনমতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে নেসকো কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জবরদস্তিমূলক কায়দায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে গ্রাহকদের আগাম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হবে। যতক্ষন প্রি প্রেইড কার্ডে টাকা থাকবে ততক্ষণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। যা সেবামুলক খাতের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ এর ৫৬ নং ধারা মতে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে কোম্পানীকে ১৫ দিন পূর্বে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু এই প্রিপেইড মিটার কার্ডের রিচার্জকৃত টাকা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যা বিদ্যুৎ আইনের পরিপন্থি। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের হয়রানীমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে একটি রিট পিটিশন চলমান রয়েছে। যা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বেই নেসকো কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের কাজ করছে।
বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রিপেইড মিটার বাণিজ্যের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল তৎকালীন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু’র ভাই-বন্ধু নামে পরিচিত একটি চক্রের হাতে। সেই চক্রকে আরও প্রায় ১৫ লাখ মিটার সরবরাহের কাজ দিতে সক্রিয় সরকারের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দুটি কোম্পানী। এজন্য দরপত্রে এমন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে, যাতে ওই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান সুবিধা পায়। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় নেসকোর জন্য ৮ লাখ মিটার কিনতে গত জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন এই প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। ক্যাপিসিটি চার্জের নামে বিগত ১৫ বছরে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এমনকি বিদ্যুতের স্পার্ট প্রিপেইড মিটারের নামে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ৫ শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
বিতর্কিত এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের মাধ্যমে গ্রাহকরা মিটার ভাড়া ও সারচার্জ বাবদ ৩০% আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হবেন। প্রিপেইড মিটারে প্রতিবার ১ হাজার টাকা রিচার্জে এজেন্ট কমিশন বাবদ ২০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমাসে গ্রাহকদের মিটার ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কতদিন এই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে তা অস্পষ্ট। গ্রাহকরা নিজেদের টাকায় ইতিপূর্বে এনালগ ও ডিজিটাল মিটার ক্রয় করলেও তার জন্য কোন টাকা বিদ্যুৎ বিভাগ পরিশোধ করেনি। প্রতি ১ হাজার টাকা রিচার্জে গ্রাহকরা কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে? বাণিজ্যিক ও আবাসিক রেট কিভাবে নির্ধারিত হবে- এসব নিয়ে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই।
প্রিপেইড মিটারে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে ২০০/- টাকা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের জন্য ৫০/- টাকা হারে গ্রাহকদের সুদ পরিশোধ করতে হবে। প্রিপেইড মিটার কোন কারণে লক হয়ে গেলে লক খোলার জন্য ৬০০/- টাকা জমা দিতে হবে। বিদ্যুতের ওভার লোডের কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ প্রবাহ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও এই প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ করার সাথে সাথে টাকা কেটে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকলে প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করা যাবে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পগুলো মওসুমের শুরুতে কৃষকরা বাকিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ফসল তুলে বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করে। বর্তমানে আর এই প্রিপেইট মিটার পদ্ধতিতে সেই সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করলে বিদ্যুৎ বিভাগের হাজার হাজার কর্মচারীকে পেশা হারিয়ে পথে বসতে হবে।
এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে কোন কারণে সার্ভার ডাউন হলে উক্ত সার্ভারের আওতাধীন প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই সার্ভার সচল না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকরা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে।
সর্বোপরি এই প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের নতুন করে হয়রানী ও দুর্ভোগে ফেলবে।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছিল। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি কোম্পানীগুলো গত ১০ বছরে ৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। যার খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ জনগণকে।সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর



