নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর ইমারত পরিদর্শক মোঃ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়াবহ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে বরিশালের সাবেক এমপি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর প্রভাব খাটিয়ে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে রাজউকে চাকরি বাগিয়ে নেন কামরুজ্জামান। ঘুষ লেনদেনের এই লোমহর্ষক অভিযোগ নিয়েই তিনি ইমারত পরিদর্শক পদে নিয়োগ পান এবং শুরু হয় তার ‘দুর্নীতির রাজত্ব’।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত থাকা কামরুজ্জামান রাজনৈতিক প্রভাবের ছত্রছায়ায় নিজেকে নিয়োগ তালিকার শীর্ষে তুলে আনেন। রাজউকে যোগদানের পরপরই তিনি জোন-৬ এর দায়িত্বে থেকে ডেমরা এলাকায় এক ভিন্নমাত্রার চাঁদাবাজি কৌশল শুরু করেন.
সেখানে রাজউকের ড্যাপ অনুযায়ী কৃষি জমিতে কোনোভাবেই ভবন নির্মাণ বৈধ নয়। অথচ সেই জমিতে গড়ে ওঠা ভবনগুলোর মালিকদের মোবাইল কোর্ট ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে তিনি আদায় করে নেন ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ‘চুপ থাকার মাশুল’।
কোনো ভবনের মালিক টাকা দিতে অস্বীকার করলেই শুরু হতো তাঁর প্রতিশোধপরায়ণ অভিযান। জারি করতেন ২সি নোটিশ, মিটিং করতেন থানায়, তারপর মোবাইল কোর্ট চালিয়ে আরোপ করতেন মোটা অঙ্কের জরিমানা। এখানেই শেষ নয়—ভবনের বিদ্যুৎ মিটার খুলে নিয়ে গিয়ে পুনঃসংযোগের জন্য আদায় করতেন আলাদা চাঁদা। নির্মাণাধীন ভবনের সামান্য ভুলত্রুটিকে ইস্যু করে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করতেন মালিকদের। চলতো অর্থ হাতানোর নির্লজ্জ মহোৎসব।
তাঁর চাঁদাবাজির কৌশলে অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বহু ভবনে রাজউকের অনুমোদন নেই, তথ্যাদির বোর্ড নেই, নিরাপদ বেষ্টনি নেই—তবুও ভবন নির্মাণ চলছে নির্লজ্জভাবে, কামরুজ্জামানের আশীর্বাদে। কেউ টাকায় রাজি হলে চোখ বন্ধ, কেউ রাজি না হলে আইন প্রয়োগ।
বর্তমানে তিনি উত্তরা জোন-২/২-এ মারদ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। অবস্থান বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি চরিত্র। এখনো জোন পরিবর্তন করে নিজের ক্ষমতা ও যোগাযোগকে ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে চলেছেন নিরীহ নাগরিকদের কাছ থেকে।
রাজউকের মতো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ যদি এভাবে রাজনৈতিক প্রভাব ও ঘুষের বিনিময়ে হয়, তাহলে সেখানে আইনের শাসনের আশা করাটাই কি ব্যর্থতা নয়? মোঃ কামরুজ্জামানের মতো কর্মকর্তারা শুধু রাজউকের নয়, গোটা রাষ্ট্রের জন্যই এক কলঙ্কচিহ্ন। তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এই দৃষ্টান্ত আরও অনেক দুর্নীতিবাজকে উৎসাহিত করবে।
বিস্তারিত পরবর্তী সংখ্যায়…