শিরোনাম
দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই: মুহাম্মদ সাইদুর রহমান সাংবাদিক শভ্র’র দায়ের করা মামলায়,আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ”সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হার্ড লাইনে ডুমুরিয়া চানপুরে ২০ কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করে ভবন নির্মাণের কাজ চললেও প্রশাসন নীরব কুমিল্লা অন্ধকল্যান সমিতির ১৭ কোটি ২২ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট হিমাগারে জেসিআই ঢাকা প্রেস্টিজের ব্যতিক্রমধর্মী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ঘুষের টাকায় রাজউকের চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন কামরুজ্জামান | পর্ব-০১ পুকুর ভরাট নিয়ে নিরব ভূমিকায় কুমিল্লার বেয়াদপ প্রশাসন বরিশাল সরকারি মডেল কলেজ: ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু মামুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ইসলামী আদর্শভিত্তিক নেতৃত্বই জাতিকে সঠিক গন্তব্যে নিতে পারে: -মাওঃ আঃ জব্বার বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা জরুরী : -মাওলানা আঃ জব্বার

বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়ন পরিশোধের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদারের কাছে ধর্ষিতা গৃহবধুর সম্মানের দাম ১০০০ টাকা।

পাবনা থেকে শরিফুল ইসলামঃ-
পাবনা বেড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনা মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানায় ধামাচাপা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বেড়া উপজেলার চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে। গত ৩১ জানুয়ারির এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) থানায় মামলা করেছেন ধর্ষিতা ঐ ভুক্তভোগী। তাৎক্ষণিক বেড়া মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে ধর্ষণ অভিযুক্ত আসামি শফিকুলকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারে গত বছর আগস্ট মাসে পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ন কেন্দ্রের ২নং ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে সুখের বসতি গড়েন ভূমিহীণ দরিদ্র এক চা দোকানি। তবে, সেই সুখের সংসারে হঠাৎ এক ঝড়ে যেন নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা।

চা দোকানির অভিযোগ, গত ৩১ জানুয়ারি দুপুরে প্রতিবেশী শফিকুল ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে তার স্ত্রীকে। বাড়িতে এসে তিনি দরজায় ধাক্কা দিলে পালিয়ে যায় শফিকুল। বিচারের আশায় স্বামীকে সাথে নিয়ে ওই দিনই চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস সরদারের কাছে যান ভুক্তভোগী নারী। তবে, মামলা বা আইনি সহযোগিতার পরিবর্তে সালিশ ডেকে অভিযুক্ত শফিকুলের নিকট হতে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা, নাকে খত ও কান ধরে উঠবস করিয়ে জোরপূর্বক মীমাংসা করে দেন ইদ্রিস চেয়ারম্যান। এমন সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানালে চেয়ারম্যান ভয়ভীতিও দেখান, বলে জানান ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী জানান, রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে চাকলা ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠকে বসে ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার। এরপর কয়েকজন ইউপি সদস্যসহ তার অনুসারীদের নিয়ে একটি সালিশী বোর্ড গঠন করে বিচারকার্য পরিচালনা করে ইউপি চেয়ারম্যান। ধর্ষককে জুতা পেটা, নাকে খত ও কান ধরে উঠাবসা করার শাস্তি দেন ওই সালিশী বোর্ড। একইসাথে অভিযুক্ত ধর্ষককে এক হাজার টাকা জরিমানা করে মীমাংসা করে দেন ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার। কিন্তু ভুক্তভোগী নারীর স্বামী তৎক্ষণাৎ এ মীমাংসা মেনে না নিয়ে থানায় মামলা করার কথা বললে তাকে হুমকি দিয়ে মামলা করতে নিষেধ করেন চেয়ারম্যান।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বলেন, আমার স্ত্রীর ইজ্জতের দাম এক হাজার টাকা নির্ধারণ করে রায় দেন ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার। রায় দেবার সাথে সাথে আমি জানিয়েছি, এ রায় মানি না। আমি থানায় মামলা করব। তখন চেয়ারম্যান ধমক দিয়ে বলেন, এতোবড় সাহস তোর, আমার রায় মানিস না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে রটিয়ে দেবো বউ দিয়ে দেহ ব্যবসা করিয়ে খাস। হুমকি দিয়ে তিনি আরও বলেন, সালিশ না মানলে পরিষদের প্যার্ডে লিখে দিব যে তোর স্ত্রী দেহ ব্যাবসা করে। এ ছাড়া গালাগালি ও নানারকম হুমকিও দেন চেয়ারম্যান। আমার স্ত্রীকে জোর করে ধর্ষণ করেছে শফিকুল। তার শাস্তি না দিয়ে উল্টো তার পক্ষ নিয়ে আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে, হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমি থানায় মামলা করেছি। পরে পুলিশ ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমি-সংক্রান্তসহ নানা ঝামেলার মীমাংসা করতে স্থানীয়রা চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদারের শরণাপন্ন হলে উভয়পক্ষকে জিম্মি করে টাকা খেয়ে সালিশ করে থাকেন। সালিশে স্বজনপ্রীতি ও টাকা খেয়ে অন্যায়ের পক্ষে রায় দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ধর্ষণের বিচার কোনো সালিশী বৈঠকে সম্পন্ন করা বিধান নেই জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আহসান হাবিব (শাওন) বলেন, ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ। এটি গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া সালিশী রায়ে অভিযুক্তকে শারীরিক শাস্তি দেবার এখতিয়ারও কারো নেই। এদিক থেকে এ সালিশী কার্যক্রম সঠিক হয়নি।

চাকলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন বলেন, ধর্ষণ অপরাধের মীমাংসা এক হাজার টাকা জরিমানা এটি কোনোভাবেই সঠিক মীমাংসা হতে পারে না। তা ছাড়াও আমাদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা ছাড়া সালিশ না করার বহু অভিযোগ আছে। এতে সাধারণ মানুষ গ্রাম আদালতের প্রতি আস্থা হাড়িয়ে ফেলছে। সে সালিশের নামে সালিশ বাণিজ্য করে।

অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে চাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার বলেন, উভয়পক্ষের সম্মতিতে সালিশ করা হয়েছে। সালিশী কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করেছেন তারা। এর বাইরে একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারাই এই বিষয়টিকে ভিন্নভাবে তুলে ধরছেন। কিন্তু ধর্ষণের মত এমন ঘৃণিত অপরাধের সালিশ মীমাংসা করার বিধান রয়েছে কিনা গ্রাম্য আদালতে এ প্রশ্নটি কৌশলে তিনি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্যদের পুলিশকে অবহিত করার দায়িত্ব রয়েছে। এ সমস্থ ঘটনার সালিশের এখতিয়ার কারো নেই। সেটি না করে অন্যায়ভাবে কেউ যদি কোনো সালিশ বা মীমাংসার বিষয়েও তদন্ত চলছে। এক্ষেত্রে অনিয়ম হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Leave a Reply