কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি :- কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভার পুরাতন বাজার, ছোট আলমপুর, বানিয়াপাড়া, বানিয়াপাড়া দক্ষিণ ও আশপাশের এলাকাজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্যে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামিরা এখনও প্রকাশ্যে বিচরণ করায় আইনশৃঙ্খলার বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার ৫ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রভাবশালী দুষ্কৃতিকারীরা বহু বছর ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে।
তাদের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নাশকতা, দখলদারিত্বসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি স্থানীয় মসজিদ, সমাজকল্যাণ সংগঠন ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডেও তাদের দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তারের কথাও তুলে ধরছেন বাসিন্দারা। হত্যা মামলার আসামিদের তালিকা ও পালিয়ে থাকা সহযোগীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় দায়ের হওয়া হত্যা মামলাগুলোর আসামি হিসেবে যাদের নাম এলাকায় আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন, ইকবাল হোসেন রুবেল, সাদ্দাম হোসেন, জহিরুল ইসলাম, নাজিম, কমিশনার বাছির, কমিশনার হোসেন, বাছির উদ্দিন রানা (আহ্বায়ক কমিটি, দেবিদ্বার উপজেলা ছাত্রলীগ) এবং মনজুর হোসেন (যুগ্ম সম্পাদক, পৌর ছাত্রলীগ)।
এদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশে অবস্থান করলেও তাদের সহযোগী ও সাঙ্গপাঙ্গরা এখনও এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি, গোপন বৈঠক, প্রভাব বিস্তার ও আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন অভিযোগ জমেছে বহুদিন ধরেই।এলাকাবাসীর অভিযোগ, কিছু অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং ছদ্মবেশী নেতাদের সহায়তায় এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) আওয়ামী লীগের ঘোষিত “লকডাউন” কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেবিদ্বারে পিকেটিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এসময় নেতৃত্ব দেন দেবিদ্বার উপজেলা ছাত্রলীগ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বাছির উদ্দিন রানা এবং দেবিদ্বার পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মনজুর হোসেন। অভিযোগকারীদের ভাষ্য নামমাত্র অভিযান নয়, এবার দৃশ্যমান ও কঠোর আইন–শৃঙ্খলা অভিযান প্রয়োজন। উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, দেবিদ্বারে যারা অতীতে হত্যাকাণ্ড বা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল তারা যেই দলেরই হোক, বিএনপি কোনো অপরাধীর পক্ষে নয়।
প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি আমাদের স্পষ্ট ও সুসংহত। উপজেলা যুবদল সভাপতি মো. নুরুজ্জামান বলেন, কিছু মহল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বিএনপি বা যুবদলের নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা চিহ্নিত হোক এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক। যুবদল কখনো অপরাধীদের আশ্রয় দেয় না এবং ভবিষ্যতেও দেবে না। দেবিদ্বার পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, যুবদল কখনো অপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেয় না।
অপরাধী যে দলেরই হোক, আমরা সবসময় ন্যায় ও সত্যের পক্ষে। জনস্বার্থবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের সঠিক তদন্ত ও সুবিচারই এখন জরুরি। দেবিদ্বার থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—কোনো অপরাধীই আইনের বাইরে থাকবে না। চলমান গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার তথ্য–প্রমাণ অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে।’


