ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে প্লেট, ঝুঁকি বাড়ছে : ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ

Juyel Khandokar

গতকাল শুক্রবার সকালে অনুভূত হওয়া প্রচণ্ড ভূকম্পনটি দেশের পটভূমিতে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ ছিল। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের উত্তরে ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল এবং পূর্বে বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল অবস্থিত। এই গতিশীল প্লেটগুলোর কারণে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানিয়েছেন, বর্তমানে প্লেট বাউন্ডারিতে যে শক্তি লক অবস্থায় ছিল, তা ‘আনলকিং’ শুরু হয়েছে। ঘন ঘন কম মাত্রার ভূমিকম্পগুলো এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি হওয়ার মতো বিপুল শক্তি ভূ-তকের মধ্যে জমা হয়ে আছে এবং এই শক্তি যেকোনো সময় বের হতে পারে।

গত কয়েক দশকে ঢাকার এত কাছে বড় ভূমিকম্প না হওয়ায় কয়েক প্রজন্ম এর ভয়াবহতা দেখেনি। তবে গত ৩০০ বছরে দেশে ও আশপাশের এলাকায় কয়েকটি প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল:

১৭৬২ সালের ভূমিকম্প: টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত ফল্ট লাইনে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫। এই কম্পনেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রায় তিন মিটার ওপরে উঠে আসে এবং এটি ডুবন্ত দ্বীপ থেকে উপরে উঠে আসা দ্বীপে পরিণত হয়। সেবার বঙ্গোপসাগরে বিশাল ঢেউ তৈরি হয় এবং ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ বদলে যায়।

১৮৬৯ সালের কাচার আর্থকোয়াক: রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের খুব কাছে শিলচড়ে। এতে শিলচড়, নওগাং ও ইম্ফল এলাকায় বহু স্থাপনা ধসে পড়ে।

১৮৮৫ সালের সাটুরিয়ার ভূমিকম্প: ৭ মাত্রার এই কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়। এর কম্পন ভারতের সিকিম থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত অনুভূত হয়।

১৮৯৭ সালের গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক: ৮ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মেঘালয়ের শিলং অঞ্চল, যা ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। এই ভূমিকম্পে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে শুধু সিলেটেই পাঁচ শতাধিক প্রাণহানি ঘটে। এতে সুরমা ও ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথে প্রভাব পড়েছিল।

১৯১৮ সালের ভূমিকম্প: শ্রীমঙ্গলের বালিছড়ায় উৎপত্তিস্থল এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬। শ্রীমঙ্গল ও ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে খুব ওপরে রয়েছে। ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে, তা যদি বের হয় তবে খুব ব্যাপক একটি ভূমিকম্প হতে পারে, যা আগামীকালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরেও হতে পারে। সাবডাকশন জোনের ভূমিকম্পগুলো সাধারণত অত্যন্ত ভয়ংকর হয়।

যেহেতু দেশের অবকাঠামো রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তাই এখন একমাত্র উপায় হলো মহড়া। ভূমিকম্পের সময় কয়েক কদমের মধ্যে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার প্রশিক্ষণ বা মহড়া নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Reply