শিরোনাম
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ, যা বলছে ভারত হাইকমিশনে হামলা দিল্লির বক্তব্য পুরোপুরি প্রত্যাখ‍্যান ঢাকার যে কারণে হাতিরঝিলে ভাই-বোনের মৃত্যু, জানালো পুলিশ হাদি হত্যায় দুইজন ফের রিমান্ডে তারেক রহমানের ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুমতি লক্ষীপুরে তালাবদ্ধ ঘরে দগ্ধ বেলালের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান ইনকিলাব মঞ্চের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা চৌদ্দগ্রামে ভ্রাম্যমান আদালতের পৃথক অভিযানে ২ মাটি বিক্রেতাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা এখন থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলবে: ইসি দৈনিক বাংলাদেশ কণ্ঠের সাংবাদিক আলমগীর হোসেনের উপর হামলার অভিযোগ

শনিবার সন্ধ্যার রাজনীতি: তিন নেতার বক্তব্যে নতুন আলোচনা, নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত

Chif Editor

মীর্জা সাইদিয়া আইরিন :- শনিবারের সন্ধ্যায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে তিন নেতার বক্তব্য যেন নতুন করে সরগরম করে তুলল রাজনৈতিক অঙ্গন। সামনে নির্বাচন, তার আগে মনোনয়ন নিয়ে টানটান উত্তেজনা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যেন আরও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে। কে নামবেন মাঠে, কার জনপ্রিয়তা কতটা, আর কে কাকে কতটা সমর্থন দিচ্ছেন—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সবাই আগ্রহী।

প্রথমেই কথা বলেন কুমিল্লার সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তিনি একেবারে স্পষ্ট ভাষায় জানালেন নিজের অবস্থান ও পরিকল্পনা। তাঁর বক্তব্য, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা কোনো অপরাধ নয়, বরং রাজনৈতিক অধিকার এবং প্রয়োজনীয় কৌশলেরই অংশ। তিনি বলেন,
“মনোনয়ন কিনতে সমস্যা কোথায়? এখনও আমি মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষেই সমর্থন চাইছি। মাঠে কাজও করছি জোরেশোরে। রোববার সকালে প্রতিনিধিকে দিয়ে ফরম সংগ্রহ করাবো, তবে জমা দেব নিজেই গিয়ে।”

তাঁর কথাবার্তা থেকে বোঝা যায়, তিনি যেমন বর্তমানে মনিরুল হক চৌধুরীর হয়ে কাজ করছেন, তেমনি সম্ভাব্য রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও মাথায় রাখছেন। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, হাজী ইয়াছিন যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তবে সেটিও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য ইতিবাচক হবে। এতে স্বভাবতই যাচাই হয়ে যাবে কার কতটা জনপ্রিয়তা আছে, আর জনগণের রায়ের সামনে তখন সবাইকেই দাঁড়াতে হবে।

এদিকে সাক্কুর মন্তব্যের জবাবে হাজি ইয়াছিনও পরিষ্কারভাবে নিজের মত ব্যক্ত করেন। তাঁর মতে, মনোনয়ন ফরম কেনা প্রতিটি রাজনীতিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। তিনি বলেন,
“যে কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেন। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।”

তবে তিনি এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে চান না। তিনি জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই তিনি ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নির্ধারণ করবেন। তাঁর দৃষ্টিতে এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি। তাই সব কিছু বিবেচনা করে, দল ও সমর্থকদের মতামত নিয়ে এগোতেই তিনি আগ্রহী। এতে বোঝা যায়, তিনি খুব সতর্ক ও পরিমিত কৌশলেই এগোতে চান।

অন্যদিকে সাক্কুর মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কুমিল্লা-৬ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী বেশ পরিমিত ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি মনে করেন, এটি সাক্কুর নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে এবং এ নিয়ে অযথা বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। তাঁর ভাষায়,
“এটা সম্ভবত সাক্কুর ব্যক্তিগত একটি কৌশল। তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সে আমার পক্ষেই মাঠে কাজ করছে।”

এতে বোঝা যায়, তিনি বিষয়টিকে প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখার চেয়ে দলীয় শক্তি ও ঐক্যের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করছেন। তাঁর বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত দলের স্বার্থ ও ঐক্যই সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়াবে।

ভেতরের লড়াই, বাহিরের কৌশল
এই তিন নেতার বক্তব্য মিলিয়ে যে চিত্রটি উঠে আসে, তা হলো—এটি কেবল একটি নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়; বরং দলীয় অবস্থান শক্ত করা, জনপ্রিয়তা যাচাই এবং কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সাক্কু একদিকে দলের প্রার্থীর পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন, অন্যদিকে প্রয়োজনে নিজেকে বিকল্প হিসাবে প্রস্তুত রাখছেন। হাজি ইয়াছিনও নিজেকে সুপরিকল্পিত ও সংগঠিত রাজনীতির অংশ হিসেবে তুলে ধরছেন। আর মনিরুল হক চৌধুরী চেষ্টা করছেন নেতৃত্ব, দলীয় ঐক্য ও আস্থার সমন্বয় বজায় রাখতে।

এ অবস্থায় এলাকার জনগণের মধ্যেও কৌতূহল ও আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে। ভোটাররা খেয়াল করে দেখছেন—কে কতটা আত্মবিশ্বাসী, কে কতটা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং কে কতটা মানুষজনের সঙ্গে মিশে কাজ করছেন। ফলে রাজনৈতিক মাঠ আরও উষ্ণ, আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে।

শেষ উপলব্ধি
শনিবার সন্ধ্যার এই কয়েকটি বক্তব্য আসলে শুধু মন্তব্য নয়, বরং আসন্ন নির্বাচনের দিকনির্দেশনা। মনোনয়ন, স্বাধীন প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা, দলীয় সমন্বয়—সব মিলিয়ে নতুন এক রাজনৈতিক চিত্র ফুটে উঠছে। এখন দেখার বিষয়, শেষ সময়ে কে কী সিদ্ধান্ত নেন এবং জনগণের রায়ের সামনে কে কতটা শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেন।

সময়ের অপেক্ষা, আর সেই সময়ই জানিয়ে দেবে—এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার শেষ হাসি কে হাসবেন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—নেতৃত্ব, কৌশল এবং জনগণের বিশ্বাস—এই তিন বিষয়ই নির্ধারণ করবে শেষ ফলাফল।

Leave a Reply