
অনলাইন ডেস্ক :- দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বাজেট ব্যয় ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক পর্যালোচনা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আজ একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ প্রবণতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মূল্যস্ফীতি
১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বিগত জুন ২০২৩–এর পর প্রথমবারের মতো নভেম্বর ২০২৫ মাসে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ ২০২৩–এ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ অতিক্রম করে ৯.৩৩ শতাংশে পৌঁছেছিল। তবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) ইতোমধ্যে জুন ২০২৫ মাসে ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসে এবং নভেম্বর ২০২৫–এ আরও কমে ৮.২৯ শতাংশে দাঁড়ায়। সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে জুন ২০২৬–এ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকায় মানুষের প্রকৃত আয় কমে গিয়েছিল। তবে চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। নভেম্বর ২০২৫–এ পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৮.২৯ শতাংশ ও ৮.০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ২০২২–২৩ অর্থবছরে এ হার ছিল যথাক্রমে ৯.০২ শতাংশ ও ৭.০৪ শতাংশ। ফলে চলতি অর্থবছরে প্রকৃত আয় ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কৃষি উৎপাদন
কৃষি খাতে যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে গত অর্থবছরে বোরো মৌসুমে ভালো ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমন ধানেও ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আর্থিক ও বৈদেশিক খাত
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত দেশের গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগস্ট ২০২৪ মাসে ছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া, প্রবাসী আয়ের গতি বৃদ্ধি এবং সুদের হার বাড়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হয়।
চলতি হিসাব (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট)
প্রবাস আয়
চলতি অর্থবছরের জুলাই–নভেম্বর সময়ে পাঁচ লাখ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার। একই সময়ে প্রবাস আয় হয়েছে ১৩.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭.১৪ শতাংশ বেশি।
আমদানি ও ঋণপত্র
অর্থনীতিকে আরও উৎপাদনশীল করতে আমদানির ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ অপসারণ করা হয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই–নভেম্বরে আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ১.২ শতাংশ, যা চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশে।
বৈঠকে বলা হয়, আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ফলে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের ভারসাম্যহীনতা কাটিয়ে একটি স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় ফিরে এসেছে।



