অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এবারের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও সদরের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। তবে শেষপর্যন্ত বিজয়ের হাসি হাসতে পারেননি তিনি। তাকে টপকে ট্রাক প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলু।
এদিকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন মমতাজ বেগম। তিনি বলেছেন, ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর লোকজন অনিয়মে জড়িত ছিলেন। এ কারণে তার পরাজয় হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পূর্বভাকুম এলাকায় নিজের বাড়ির উঠানে কর্মীসভায় এসব কথা বলেন মমতাজ।
তিনি বলেন, সিংগাইর উপজেলার বলধরা, বায়রা ইউনিয়ন ও সিংগাইর পৌরসভার ভোটকেন্দ্রগুলোতে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। বিদেশে আছে, মারা গেছে—তাদের ভোটও দেওয়া হয়েছে। আমি অন্য জায়গায় পাস করলেও এসব এলাকায় অস্বাভাবিক ভোট হওয়ায় পরাজিত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু কালো টাকা ছড়িয়ে বিএনপি-জামায়াতের ভোট কিনে এমপি হয়েছেন। নির্বাচনের রাত থেকে তার লোকজন আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা করেছে। প্রতিনিয়ত আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা করছে, ককটেল ফাটাচ্ছে। তাদের হাত থেকে নারীরাও রেহাই পাচ্ছে না। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে। তারা সিংগাইর পৌরসভার কাউন্সিলর সোহেল, তার স্ত্রী ও মেয়ের ওপর হামলা করেছে। চান্দহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মুরগির খামারে আগুন দিয়েছে। জয়মন্টপ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসলামকে তারা মারধর করেছে। সে কোনোরকমে জীবন নিয়ে পালিয়েছে।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কারও ওপর হামলা হলে, আঘাত করলে আমাদের জানাবেন। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হলে আমরাও বসে থাকব না। তবে আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আপনাদের কারও ওপর হামলা হলে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সম্মিলিতভাবে আপনাদের পাশে দাঁড়াব। ভয় পাবেন না।
অভিযোগের বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার রেহেনা আক্তার বলেন, তিনি আমাদের কাছে এই অভিযোগ দেননি। তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। অভিযোগ পেলে আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
এদিকে নির্বাচনের পরদিন সোমবার (৮ জানুয়ারি) দেশপত্র সিঙ্গাইর প্রতিনিধির সঙ্গে কণ্ঠশিল্পী মমতাজের কথা হলে তিনি বলেন, সকাল থেকেই বাসায় নেতাকর্মীরা আসছেন। তাদের সবার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপে যাব।
এদিকে নেতাকর্মীদের ওপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুলের কর্মীরা হামলা করছে উল্লেখ করে এই কণ্ঠশিল্পী বলেছিলেন, সকাল থেকেই বিভিন্ন নেতাকর্মী এসে আমার কাছে অভিযোগ করছে যে তাদের নানাভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা অত্যাচার করছে। কারও খামারে আগুন দিচ্ছে, আবার কারও স্ত্রীর গায়ে হাত তুলছে, কাউকে কুপিয়ে জখম করছেন। মোট কথা আমাদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চলছে।
প্রসঙ্গত, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম ২০০৮ সালে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।