কুমিল্লা প্রতিনিধি :
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাহাবাদ ডি জে এস দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা অলিউর রহমান চৌধুরির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, পরীক্ষার হলে নকল সরবরাহ ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অলিউর রহমান চৌধুরি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার জগতপুর গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও ২০১৬ সালের অক্টোবরে এলাহাবাদ ডি জে এস দাখিল মাদ্রাসায় সুপার পদে যোগদানের পর বুনে গেছেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসা ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করে নিজ এলাকায় নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন একাধিক মাদ্রাসা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মালিক হয়েছেন নগদ অর্থ সহ কুমিল্লা শহরে একটি বিলাসবহুল বাড়ির।
শুধু তাই নয়, মাদ্রাসার সুপার হয়েও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের তাবেদারি করেছেন এই মাওলানা অলিউর রহমান চৌধুরি। গেলো আট বছর ধরে মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের দাওয়াত করে প্রতিষ্ঠানের নামে সংগ্রহ করেছেন লাখ লাখ টাকা। তবে সেসব টাকার হিসাব কখনোই পায়নি প্রতিষ্ঠান। নানান অজুহাতে, বিভিন্ন কাজের ভুয়া প্রমাণে নিজেই হাতিয়ে নিয়েছেন সেসব টাকা। বাংলাদেশ জমিয়তে আহলে হাদিসের কুমিল্লা জেলা সেক্রেটারি পদবী লাগিয়ে সংগঠনের নামেও কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে গেলো ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তারপরও অজানা শক্তির জোড়ে বহালতবিয়তে এলাহাবাদ ডি জে এস দাখিল মাদ্রাসার কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, রাতের আধারে ছক কষে করা হতো প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন। অভিভাবক ভোটে অভিভাবকদের মধ্যথেকে ম্যানেজিং কমিটি করার কথা থাকলেও নিজ স্বার্থ হাসিলে ব্যাক্তিগত লোকদের বানানো হয়ে ছিলো কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি। যাদের কোনো সন্তান ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নন। কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারির সাথে ভাগাভাগি করে তবেই অর্থ আত্মসাৎ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে অলিউর রহমানের বিরুদ্ধে।
এছাড়া মাদ্রাসায় বিভিন্ন পরিক্ষার নাম করে অতিরিক্ত ফি আদায়, সেন্টার পরিক্ষায় নকল সরবরাহ করতেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো মোটা অংকের নগদ অর্থ। তবে হতাশার বিষয় হলো, গত আট বছর টাকার বিনিময়ে কেনা নকল দিয়ে একটিও জিপিএ ৫ আনতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বরং অনেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে দিনের পর দিন। ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সাথে রাফাদফা করেই হতো সেসব নকল সরবরাহ।
২০১৬ সালে মাদ্রাসায় যোগদানের পর রাস্তার পাশের এবং মাদ্রাসা মাঠের বড় বড় গাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। লাখ লাখ টাকা উন্নয়নের খাতে ব্যয় দেখানো হলেও একটুকু সংস্কার কিংবা উন্নয়নের ছুঁয়া লাগেনি প্রতিষ্ঠানে। যার প্রমাণ মিলেছে মাদ্রাসার অর্ধভাঙ্গা বাউন্ডারি দেয়াল আর জড়াজির্ণ গেইটে।
এদিকে সরকারি নিয়মানুসারে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম চলমান থাকার কথা থাকলেও ওই আইন ভঙ্গ করেছেন সুপার অলিউর রহমান। নিজের করা নতুন নিয়মে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে মাদ্রাসার পাঠদান কার্যক্রম। সপ্তাহে একদিন মাদ্রাসায় উপস্থিত হলেও অটো সাইনে হাজিরা নেন প্রতিদিনই। সরকারি কোনো জরিপ হলে নীল খামের চালানে সব কিছুই স্বাভাবিক থাকতে দেখা যায়। উপস্থিতির দিন শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সব হিসাব-নিকাশ বুঝে নিতে ভুল করেন না তিনি। এছাড়া কখনো কখনো অভিভাকরা প্রতিবাদ করতে চাইলে সন্তানকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেন ওই মাদ্রাসা সুপার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী ও অভিভাবক জানান, ২০১৬ সালের অক্টোবরে মাওলানা অলিউর রহমানকে মাদ্রাসা সুপার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর নিজের লোকজন দিয়ে ম্যানেজিংক কমিটি করে এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে মাদ্রাসা ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ, লেখাপড়ায় অনিয়ম সহ নানান দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরেন তিনি। বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সাথে ওঠাবসা আর সম্পর্ক থাকার ফলে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যন্ত করার সাহস পায় না। আমরা বর্তমান অর্ন্তভর্তিকালীন সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি, এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে অতি শিগগিরই দুর্নীতিবাজ মাদ্রাসা সুপার অলিউর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে তার সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে যেন সুষ্ঠ তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে এলাহাবাদ ডি জে এস দাখিল মাদ্রাসার সুপার অলিউর রহমান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে তার ব্যবহৃত ০১৭*৪-৭**১*৬ (ব্যাক্তিক গোপনীতা বজায় রাখতে কিছু সংখ্যায় স্টার ব্যবহার করা হয়েছে) নাম্বারে একাধিকবার ফোন দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।