নিজস্ব প্রতিবেদক।।বরিশাল মহানগর যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য সচিব ইউসুফ খান রনিকে কিলিং মিশনে কে বা কারা জড়িত? কেন-ই-বা তাকে হত্যার পরিকল্পনা? ঘটনার মূলহোতা কে? রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন ধুমায়িত হচ্ছে। ঘটনার পর ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে পরিচিত লিটন ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন পুলিশ। তবে কোতায়ালী থানা অভ্যন্তরে ঢুকে এই হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে কে বা কারা জড়িত, এ বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও পুলিশ বলছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনার পুরো রহস্য উদঘাটনে গ্রেপ্তার দুইজনের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ডে আবেদন জানানোা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবদল নেতা ইউসুফ খান রনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিককে বলেন, গ্রেপ্তার লিটন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, কিংলিং মিশনের নেপথ্যে কে রয়েছে? কার সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আমাকে খুনের উদ্দেশ্যে কুপিয়েছে? এসব পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরও মূলহোতাকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এক্ষেত্রে থানা পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলেন তিনি।
সন্ত্রাসী কর্তৃক এলোপাথারীভাবে কুপিয়ে জখমের সময় পুলিশের নিরব ভূমিকার কথা তুলে ধরে যুবদল নেতা রনি বলেন, থানার সামনের সড়কে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। আমি প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে থানার ভেতরে প্রবেশ করি। তখন দাড়িয়ে থাকা ৪/৫ জন পুলিশের কাছে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে প্রাণ রক্ষার আকুতি জানালেও তারা এগিয়ে আসেনি। থানার ভেতরে-ই পুলিশের সামনে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আমাকে কুপিয়েছে।
পুলিশের এই নিরবতার কারণ প্রসঙ্গে গুরুতর আহত যুবদল নেতা বলেন, দায়িত্বরত পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক ও বিতর্কিত। হামলার সময় কেন পুলিশ নিরব ছিল, এটাও খতিয়ে দেখতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি দাবি জানান। বিশেষ করে হত্যাচেষ্টার মূলহোতাসহ জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে আশু দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এদিকে, রনিকে হত্যাচেষ্টায় প্রথমে সিএনজি চালক মন্টু মিয়াকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরই সূত্রধরে রুবেল হোসেন মজুমদার (৩৫) কে নগরীর সাহানারা পার্ক থেকে ১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। রুবেলের স্বীকারোক্তিনুযায়ী লাকুটিয়া সড়কের সিকদার এন্টারপ্রাইজ থেকে একইদিন রাত পৌনে ১২টার দিকে লিটন সিকদার ওরফে লিটু (৩০) কে গ্রেপ্তার করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এরমধ্যে গ্রেপ্তার রুবেল হোসেন মজুমদার পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের বাজিতা এলাকার শিশুহাটের বাসিন্দা আফজাল হোসেন মজুমদারের ছেলে। নগরীর ২২ নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়া এলাকার মদিনা মসজিদের সামনে বসবাস করে আসছিল। অপরদিকে নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ডের লাকুটিয়া সড়কের আবেদ আলী শাহ মাজার সংলগ্ন মৃত: নজির সিকদারের পুত্র গ্রেপ্তার লিটন সিকদার ওরফে লিটু।
প্রসঙ্গত, রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে লাইনরোডস্থ বাসা লাগোয়া বাবরী মসজিদের বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে যুবদল নেতা ইউসুফ খান রনি তার ভাগ্নে মামুনের সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ একটি সিএনজি ও দুটি মোটরসাইকেলে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী সেখানে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করে। প্রাণ রক্ষায় থানার মধ্যে দৌড় দিলে লাইন রোডে সন্ত্রাসীরা আঘাত করে। একপর্যায়ে দৌড়ে থানার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন রনি। সেখানে গিয়েও তাকে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
পরবর্তীতে তাকে আশংকজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
পুলিশের দায়িত্ব পালনে কোন ধরণের অবহেলা ছিল না দাবি করে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন- থানার অভ্যন্তরে ঢুকে সন্ত্রাসীরা যুবদল নেতা রনিকে কুপিয়ে দ্রুত সটকে পড়েছে, তখন পুলিশ অপ্রস্তুত ছিল। এ কারণে ওই মুহুর্তে হামলাকারীদের পাকড়াও করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ এ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে। সিসিটিভির ফুটেজে হামলার সঙ্গে জড়িত ৭ জনকে সনাক্ত করা গেছে। এরমধ্যে দুইজনকে অলরেডি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন পুলিশ। হত্যাচেষ্টার রহস্য উদঘাটনে গ্রেপ্তার দু’জনের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ডে আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যুবদল নেতাকে হত্যাচেষ্টায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে মন্তব্য করেন ওসি মিজানুর রহমান।