শিরোনাম
মমেক হাসপাতালে দালাল চক্র নিরসনে মোবাইল কোর্টে গ্রেপ্তার ১৮ জনকে সাজা প্রদান ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ১০২ পিস ইয়াবাসহ মাদক সম্রাট সুজনকে আটক করেছে পুলিশ দেবিদ্বারে খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন: অভিভাবক সদস্য পদে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যালট নম্বর ৪ মানবিক সংগঠন “মানবিক কুমিল্লা” উদ্যোগে শতাধিক অসহায় ও দরিদ্র পরিবারে মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ রংপুরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির প্রচারাভিযান গণমানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন জোট গঠন এর ঘোষণা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ২শত কোটি টাকার ১৮৩ প্রকল্প অনুমোদনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পেশাদারিত্বের ঘাটতি ও চরম অদক্ষতা ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ যেন উজিরে খামাখা? ভেঙে পরেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি  ঠাকুরগাঁওয়ে বিএডিসি বীজ ডিলারদের সার ডিলার হিসেবে নিবন্ধনের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান বুড়িচংয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভা

শ্রম অধিদপ্তর: শীর্ষ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিরা যখন নিরব দর্শক, তখন কে জাগাবে ঘুমন্ত ন্যায় বোধকে

Juyel Khandokar

শ্রমিকদের আইনগত অধিকার সুরক্ষা, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন, গঠনতন্ত্রের সংশোধনী, কার্যকরী কমিটির নির্বাচন তত্ত্বাবধান করা, অভিযোগ পত্রিকার ব্যবস্থা ইত্যাদি কাজে সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিশীল। কিন্তু বাস্তবে-এ প্রতিশ্রুতি যেন, অফিসের দেয়ালে সজ্জার জন্য ব্যবহৃত ওয়ালপেপার। তবে এসব কিছু নিয়ে সেবা প্রার্থী ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা বিস্মিত নয়! তারা বলছে, এখানে সেবা মানেই অর্থ আর রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করা মানে নিলামের দরপত্র। শ্রমিকের স্বপ্ন এখানে ধুলোমলিন আর অধিকার শব্দটি শুধুই ফাইলের শিরোনাম। আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, রংপুর-এ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশের ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ। আর সেবা প্রার্থীদের দর কষাকষি করে সেবা পাওয়ার ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না। ধরে নেওয়া হয়, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ব্যবস্থা থেকে সাধারণ সভার কোরাম এবং নির্বাচন উতরে যাওয়া-সেবা গ্রহণের সব ক্ষেত্রেই চলে, নিলাম পদ্ধতির অব্যক্ত লেনদেন। যেখানে ঘুষই দরপত্র। পক্ষ-বিপক্ষের যিনি বেশি প্রস্তাব দেবেন, সেবা তারই জন্য। যিনি দর কষাকষিতে অপারগ, তিনি আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমন প্রক্রিয়া, যেন ন্যায় বিচার নয়। সেবা নিতে ধরনা দিতে হয় দুর্নীতির দরজায়!

শ্রম আইন, শ্রমিক অধিকার এবং বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে, একটি বিষয় স্ফটিকের মত পরিষ্কার বুঝেছি। শ্রম অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা আইনের ভাষাকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইচ্ছামত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে উলটপালট করতে দ্বিধা করেন না। ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন ক্ষমতার ২৪ জুন ২০১৮ তারিখের প্রজ্ঞাপনে, অনূর্ধ্ব ১০০ জন শ্রমিক নিয়োজিত দর্জি ও পোশাক প্রস্তুতকারী শিল্পের ক্ষেত্রে-সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ভিত্তিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা ও থানা ভিত্তিক রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক, ফার্নিচার, কুলি, নির্মাণ শ্রমিক, স্বর্ণকার, ডেকোরেটর, প্যাকেটিং শিল্প, ফটোগ্রাফার, ফেরিওয়ালা, সেলুন, দোকান ও বিউটি পার্লার, দোকান প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ, স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, ছ’মিল শ্রমিকগণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ভিত্তিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা ও থানাভিত্তিক রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার বিধান রয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালে ঘোষিত আরেক প্রজ্ঞাপনে হস্তচালিত তাত, হোসিয়ারিকে-এ তালিকায় যুক্ত করা হয়।’অঞ্চল’ অর্থাৎ ইংরেজি Zone শব্দটি এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ দায়িত্বশীল অন্যান্যরা-এই ‘অঞ্চল’ কে এমনভাবে ব্যাখ্যা করছেন, যেন-এর অর্থ ‘ওয়ার্ড’। আইনের শব্দ যেন তাদের ব্যক্তিগত অভিধানে পরিবর্তিত হয়ে গেছে! এই ব্যাখ্যা দিয়ে, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডে ফার্নিচার ও ছ’মিল শ্রমিক ইউনিয়নকে ‘অঞ্চল’ ভিত্তিক দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছেন।

রাজশাহী শ্রম আদালতের একজন আইনজ্ঞ, যিনি শ্রম আইন বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন, আমাকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, “এটা একেবারেই আইনের নির্লজ্জ অপব্যবহার। যেখানে আইন ‘জোন’ বলছে, সেখানে খেয়াল খুশিমতো ওয়ার্ডকে ‘অঞ্চল’ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন।’ এটা শুধুমাত্র ব্যাখ্যার খেলা নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহারের চরম নিদর্শন।’ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে, এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ‘জলঢাকা পৌরসভা লোড আনলোড কুলি শ্রমিক ইউনিয়ন। কুড়িগ্রাম পৌরসভা কুলি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং সর্বশেষ এ তালিকায়, জলঢাকা পৌরসভা কুলি মজদুর শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রং ৭৯)-এর নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও একইভাবে কর্তৃত্বের অপব্যবহার করা হয়েছে।’ বললেন, জলঢাকা থেকে এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা, একজন লেবার ইউনিয়ন নেতা। এ ঘটনাগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, আঞ্চলিক কার্যালয়ের অনিয়ম যেন জবাবদিহীর আওতায় না আসে; তার জন্য উপর মহলে কিছু শক্তিধর ব্যক্তি গোপনে দায়িত্ব পালন করছেন। আসলে যা হচ্ছে, তা সত্য গোপনের পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

রংপুরের একজন প্রবীণ শ্রমিক নেতা আমাকে বলেছেন, “আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরে সেবা শব্দটি যেন বিলুপ্তির পথে। তার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে অপ্রকাশিত ট্যারিফ তালিকা।’ যেমন-ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা। আর অবৈধ জলঢাকা পৌর লোড আনলোড কুলি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রং-৭০)-এর নিবন্ধন পেতে তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু নিবন্ধনই নয়, গঠনতন্ত্র সংশোধন, বার্ষিক রিটার্ন দাখিল, এমনকি তদন্তের মত সাধারণ কাজেও ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না। প্রত্যেকটি সেবার জন্য মূল্য দিতে হয়।’ একজন বিক্ষুব্ধ ট্রেড ইউনিয়ন নেতার মন্তব্য ‘এখানে শুধু ট্রেড ইউনিয়নের আবেদন জমা দিলেই হয় না। ঘুষ না দিলে, সেই আবেদনে ধুলোর আস্তরণ পড়ে। আর টাকা দিলে ফাইল চলে জেটের গতিতে।’ তার এ কথা যেন সেই প্রবাদকেই মনে করিয়ে দেয়, ‘যেই লাউ সেই কদু’ অর্থাৎ দুর্নীতির চক্র একই, কেবল পাত্র ভিন্ন। আমার এক সহকর্মী সাংবাদিক, যিনি এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি আক্ষেপ করে আমাকে বলেছেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন করেছি। কিন্তু প্রতিবেদন ছাপা হলেও, কোন ঘটনার দৃশ্যমান তদন্ত হয়নি।’

নীলফামারী জেলার পরিবহন সেক্টরের একজন শ্রমিক নেতা বললেন, “দুর্নীতির এই কালো থাবা শুধু নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নীলফামারী জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রাজ-১৪৭৬)-এ সৃষ্ট নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, রংপুর-কার্যালয়ে, একটি সভা ডাকা হয়। সেখানে বিরোধীয় দুই পক্ষ এবং আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। দুই পক্ষ হতে দুইজন করে নিয়ে পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত করেন দপ্তরের একজন সহকারী পরিচালককে। আশ্চর্যজনকভাবে এই সরকারি কর্মকর্তাই ৬ লাখ ২৪ হাজার ৩০০ টাকা নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন। যদিও সাধারণ সদস্যদের ভাষ্যমতে , ‘সাধারণ সভা ছাড়া গঠিত কমিটি গঠনতন্ত্র সম্মত নয়।’ আর বিরোধী পক্ষের একাংশের মতে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আচরণ পক্ষপাত মূলক।’ এই সন্দেহে এক পক্ষের দুইজন সদস্য পদত্যাগ করেন। পরে তাদের পক্ষে জামিয়ার রহমান নামে একজন বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত নীলফামারীতে নির্বাচনী কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে, মামলা দায়ের করে তা অর্জন করেছেন।

আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের কাজ ট্রেড ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন এবং গোপন নির্বাচন তত্ত্বাবধান করা। কিন্তু এক্ষেত্রে আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, তত্ত্বাবধানের পরিবর্তে সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেজে নির্বাচন পরিচালনার কাজে যুক্ত হয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন। আর মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা নিজেদের তত্ত্বাবধানে রেখেছেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একজন বিশ্লেষক বলেছেন, ‘এ ধরনের কর্তৃত্ব বহির্ভূত দায়িত্ব গ্রহণ, আসলে একটি ছদ্ম সততার মুখোশ। যার পিছনে লুকিয়ে থাকে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ব্যক্তিগত সুবিধা অর্জনের দূরভিসন্ধি।’

এরপর নীলফামারী জেলা হোটেল রেস্তোরাঁ শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রাজ-২৮৩৩)-এই ইউনিয়নটিতে বিগত ১৬ বছরেও কোন নির্বাচন হয়নি। সাবেক শাসকের কিছু দলীয়কর্মী, ইউনিয়নটি জিম্মি করে নিজেদের ইচ্ছামত পরিচালনা করেছেন। সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর নেতারা অদৃশ্য হয়ে গেলে, শ্রমিকরা সাধারণ সভা ডেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন; তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনী ফলাফল দাখিল করেন। আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, সেই ফলাফল নথিভুক্ত না করে, নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির নিকট ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন। ‘টাকা না দিলে, ফলাফল অনুমোদিত হবে না মর্মে উপ-পরিচালকের কেশিয়ার খ্যাত একজন অফিস সহকারি ইউনিয়ন নেতাদের অবগত করেন।’ বাধ্য হয়ে ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। বললেন, ইউনিয়নটির নবনির্বাচিত সভাপতি। কিন্তু দাবি ছিল ২ লক্ষ টাকা! চাহিদা অনুযায়ী পুরো টাকা দিতে অপারগ হওয়ায়, ওই অফিস সহকারি আত্মগোপনে থাকা নেতাদের পক্ষের লোকজনকে ডেকে, তাদের কাছে অভিযোগ লিখে নিয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। এমন অভিযোগ এনে, নির্বাচনী ফল প্রত্যাখ্যান এবং পূর্বের নেতাদেরকে সাধারণ সভা করে নির্বাচন প্রক্রিয়া গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইউনিয়নটির নবনির্বাচিত সভাপতি তার কাছে সংরক্ষিত একটি ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে আমাকে বলেছেন, নির্বাচনের পূর্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায়, আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক ও তার ক্যাশিয়ার খ্যাত একজন স্টাফ সহ সাধারণ সভা তত্ত্বাবধানে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অফিস প্রধান হিসেবে উপ-পরিচালক নিজে সাধারণ সভা তত্ত্বাবধানে উপস্থিত থাকলে, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হতে পারে। তাই মাঠ পর্যায়ের কাজ তাদের জন্য উপযুক্ত নয়।’

এসব বিষয়ে, শ্রম অধিদপ্তর, মহাপরিচালক-এর হোয়াটসঅ্যাপে রংপুর জেলা ট্রাক,ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রাজ ৯২১)-এর বিতর্কিত ভোটার তালিকা, সাধারণ সভা কোরাম না হওয়া, ইত্যাদি অভিযোগে নির্বাচন বাতিল করে; গত ৪ মার্চ ২০২৫ তারিখ, আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর হতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনরায় নির্বাচনী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়া এবং পরবর্তীতে আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের নীরবতা সম্পর্কে জানতে চেয়ে বলেছি, আপনি বিষয়টি অবগত আছেন কি না? যদি অবগত থাকেন, তবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তার অবহেলার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?
মহাপরিচালকের জ্ঞাতার্থে প্রেরিত একগুচ্ছ প্রশ্নমালায় আরও জানতে চেয়েছি, সম্প্রতি নিবন্ধিত জলঢাকা পৌরসভা লোড আনলোড কুলি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রং-৭০)-এর নিবন্ধন দেওয়া কি উপ-পরিচালক, আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের এক্তিয়ার লঙ্ঘন বা ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? জলঢাকা উপজেলায় শ্রম আইন, বিধি ও ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন ক্ষমতার প্রজ্ঞাপন বহির্ভূতভাবে ইতিমধ্যে ৯ টি লেবার ইউনিয়ন সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও, নতুন ২ টি পৌরসভা ভিত্তিক লেবার ইউনিয়ন নিবন্ধন-এর ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক চাপ, দলীয় সুপারিশ কিংবা আর্থিক লেনদেন হয়েছে কি না? এই গুরুতর সন্দেহ কে আপনার দপ্তর কিভাবে দেখছে? এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? পরিতাপ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত-এর কোন জবাব পাওয়া যায়নি। অনেকের মতে, অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তার এই নীরবতা ‘চুপ থাকা মানে সায় দেওয়া’ প্রবাদের আরেক প্রতিচ্ছবি।

এই লেখকসহ এক সহকর্মী, এসব অভিযোগ এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপ-পরিচালকের বক্তব্য জানতে তাঁর দপ্তরে গেলে, একজন অফিস সহকারী, আমাদেরকে সহকারী পরিচালকের রুমে বসতে দেন। কিছুক্ষণ পর উপ-পরিচালকের ক্যাশিয়ার খ্যাত ওই অফিস সহকারি রুমে ঢুকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেন, ‘চেয়ারে বসেছেন কেন? বের হন।’ তার এই আচরণে সহকর্মীর সরস মন্তব্য, ‘এমন হুমকি শুধু দুর্নীতি আড়ালের চেষ্টা নয়, বরং তার স্বর।’ পরে উপ-পরিচালকের রুমে ঢুকে সরকারি দায়িত্ব পালনের নামে প্রতিটি কাজে স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে পড়া সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে চাইলে, তিনি কোন জবাব না দিয়ে, পাশে থাকা একজন সহকারী পরিচালক কে দিয়ে, ‘এসব ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করতে অনুরোধ করেন।’ তবে অফিসের একজনের চুপিসারে দেওয়া বক্তব্য ‘সবই উপরের জানাশোনা অনুযায়ী হয়। যাদের সমস্যা তারা আদালতে যান।’ এ যেন সেই পুরনো প্রবাদ ‘চোরের মায়ের গলা বড়।’

রংপুরের ওই প্রবীণ শ্রমিক নেতা জোরের সঙ্গেই আমাকে বলেছেন, ‘আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের কর্মকাণ্ড শ্রমিক সমাজের জন্য বেদনার। ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন এখন নিয়ন্ত্রিত এক পণ্য, যেখানে দরদাম না করলে অধিকার ধরা দেয় না। নির্বাচনও আর গণতান্ত্রিক চর্চা নয়; উতরে যেতে হলে নির্বাচনী কার্যক্রম তত্ত্বাবধানকারীদের সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনে জড়াতে হয়। আইনের ধারা রূপ নিয়েছে ব্যাখ্যার খেলায়, আর ‘অঞ্চল’ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যক্তিগত স্বার্থে।
বাংলাদেশ বদলাচ্ছে-স্মার্ট হচ্ছে, ডিজিটাল হচ্ছে, কিন্তু এই রূপান্তরের ছায়ায় যদি দপ্তরগুলো শ্রমিকদের অন্ধকার গর্তে ঠেলে দেয়, তবে আইনের শাসন এক বিষাক্ত ছলনা ছাড়া কিছুই নয়। একজন বিশ্লেষকের মন্তব্য, ‘শীর্ষ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিরা যখন চোখ বুজে থাকে, তখন কে জাগাবে ঘুমন্ত ন্যায় বোধকে?’

লোকমান ফারুক, প্রাবন্ধিক ও অনুসন্ধানী কলাম লেখক।

Leave a Reply