শিরোনাম
রংপুরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির প্রচারাভিযান গণমানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন জোট গঠন এর ঘোষণা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ২শত কোটি টাকার ১৮৩ প্রকল্প অনুমোদনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পেশাদারিত্বের ঘাটতি ও চরম অদক্ষতা ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ যেন উজিরে খামাখা? ভেঙে পরেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি  ঠাকুরগাঁওয়ে বিএডিসি বীজ ডিলারদের সার ডিলার হিসেবে নিবন্ধনের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান বুড়িচংয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভা ঠাকুরগাঁওয়ে চার দফা দাবিতে নাগরিক উন্নয়ন ফোরামের মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত বুড়িচংয়ে নির্যাতনে কলেজ ছাত্র হত্যায় দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন রংপুরে মাকে হত্যা মামলায় পুত্রের মৃত্যুদন্ডের আদেশ বিরলে ১৭শ কৃষক বিনামূল্যে পেলো সার ও বীজ

শতাংশ হিসাব করে ঘুষ নেন টঙ্গী রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা ও সমিতির সিন্ডিকেট চক্র

Juyel Khandokar

শাফিন আহমেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক:- এ অফিস দুর্নীতিমুক্ত’– টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ঝুলছে এমন সাইনবোর্ড। তবে বাস্তবতা উল্টো, রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। এখানে কর্মচারীর মুখ থেকে কথা বের করতেও দেখাতে হয় টাকার চেহারা! সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরের টেবিলে টাকা ফেললে যেভাবে চাইবেন, সবকিছু মিলবে সেভাবে। ওপর মহলের ছায়ায় সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দলিল লেখকদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। ঘুষ ছাড়া মিলেনা সেবা, নড়েনা ফাইল। এমন চিত্র অতীতেও ছিলো, বর্তমানেও কোনো অংশে কম নেই।
‎অভিযোগ রয়েছে, ‘নির্ধারিত ফিসের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মূল দলিলের নকল উত্তোলন করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়, মূল দলিলে গ্রহীতার নাম পরিবর্তন করে দেয়াসহ নানা অপকর্মের মহোৎসবের কায়েম রাজত্ব করেছে ভেন্ডার সমিতির সিন্ডিকেট চক্র ও (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাব রেজিস্ট্রার। ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতারা বলছেন, ‘নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ হয় না এই অফিসে। জমির দলিল আটকে রেখে চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রার, অফিস সহকারী, নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে।
‎টঙ্গী সাব রেজিস্ট্রি অফিসটি রাজধানী ঢাকার লাগোয়া গাজীপুরের মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস। টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা, পূবাইল ও গাছা থানা এলাকার সব জমিজমা ও স্থাপনার দলিল সম্পাদন এখানে হয়ে থাকে। নগরায়নের ছোঁয়া ও শিল্পাঞ্চলসহ এই চারটি মেট্রিপলিটন থানা এলাকায় জমিজমা অনেক বেশি হস্তান্তর হয়ে থাকে অথচ চলতি বছরে গত ১৬ জুলাই অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যান (এলপিআর) টঙ্গীর দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব রেজিষ্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনদিন পর পার্শ্ববর্তী কালিগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার মো.হাফিজুর রহমানকে এ অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে এক রাঘববোয়ালের অবসর হলেও তারই প্রেতাত্মা একই পথ অনুসরণ করে চলছে অর্থাৎ (পূর্বের সিন্ডিকেট, সিন্ডিকেটের রোষানলে স্বয়ং সাব রেজিস্ট্রার তাল মেলাচ্ছে)। গাজীপুর ৫ টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও, সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয় রয়েছে ৭ টি। তার মধ্যে টঙ্গী, সদর, সদর ২য় যুগ্ম- এই তিনটি কার্যালয় লোভনীয় পয়েন্ট। অনেকে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ নিয়ে এখানে বদলী হয়ে আসে। দলিল চাপের মুখে সপ্তাহে দু’দিনের পরিবর্তে তিনদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেও সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসের ঘাটতি কোনো অংশেই কমাতে পারছে না, এদিকে জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমানের অনুমতিতে ২ দিন কালিগঞ্জ দায়িত্ব পালন করছে। দেখা যায়, সেবাগ্রহীতাদের দলিল বেলা ১১ টায় সাবমিট করলে বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ  ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার অবসান শেষে সিরিয়াল মেলে। এসব দুর্ভোগের কারণে জমির মালিকরা জমি বেচাকেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। পাশাপাশি দলিল লেখকরাও বেকার হয়ে পড়ছেন। সাধারণের চোখে এত পরিশ্রম, চেষ্টা এগুলো দৃশ্যমান হলেও, পর্দার আড়ালে অনুসন্ধানে উঠে আসে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
‎অনুসন্ধানে এই কার্যালয়ের মোহরার বাসিরের সঙ্গে দলিল সম্পাদন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথপোকথন হলে তিনি জানান, ‘গাছা ইউনিয়ন মৌজায় (শ্রেণি: বাড়ি) ৮.২৫ শতাংশ জমিতে (প্রতি ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫১ টাকা) রাউন্ড ফিগার ৫২ লাখ ২৯ হাজার টাকা অথবা কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা হিসেব করলে পে-অর্ডার ২ লাখ ৫০ হাজার হয়। তবে পে-অর্ডারের রাউন্ড ফিগার হিসেব করে ০.৫%  ‘অফিস খরচ’ অর্থাৎ এর মধ্যে (সাব রেজিস্ট্রার খরচ, কর্মচারী খরচ, প্রশাসন খরচ, রাজনৈতিক খরচ) দিতে হবে কিন্তু শর্ত প্রযোজ্য’। শুধু তাই নয়, দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতির নামেও দলিল প্রতি পে অর্ডার গননা করে সেখান থেকে ০.২% থেকে ০.৩% আরও একটি বাড়তি সেরেস্তা খরচ নেওয়া হয়। কখনো কম, কখনো বেশি। তবে ‘অফিস খরচ’ এবং ‘সেরেস্তা খরচ’ এই দু’টি খাত সম্পূর্ণ সরকারি আইনবহির্ভূত কাজ। টঙ্গীর এ কার্যালয় থেকে সপ্তাহে ৫০০ থেকে ৬০০ জমির দলিল রেজিস্ট্রি হতো এখন হয় ২০০ ছুঁই ছুঁই। এ কার্যালয় থেকে সরকারি কোষাগারে বড় অংকের রাজস্ব যোগ হয়। অথচ শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ না দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছে জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা, কিন্তু এখানেও সিন্ডিকেটটি কোনো অংশে থেমে নেই। ফাইল তাড়াতাড়ি প্রসেস নিয়েও নতুন বাণিজ্য শুরু হয়েছে দপ্তরটিতে। অর্থাৎ বলা চলে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ কেলেঙ্কারি। এর আগে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ জুলাই পর্যন্ত সাব রেজিস্ট্রারের একই চেয়ারে রাজত্ব করেছিলো মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত আবু হেনা মোস্তফা কামাল, পূর্বের জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহারের আশীর্বাদপুষ্ট। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবু হেনা মোস্তফা কামাল দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির যেমন অভিযোগ ছিলো, বর্তমানেও হাফিজুর রহমান দায়িত্বকালীন সময়ে একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
‎অনুসন্ধানে উঠে আসে, এসবের পেছনে রাজনৈতিক বড় একটি অপশক্তি কাজ করছে। যা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেও নিষিদ্ধ সংগঠন সহ মূল দলের চেইন অব কমান্ডের নির্দেশনায় যেভাবে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত হয়েছিলো এই অফিসে, ২৪ এর ৫ই আগস্টের পরও ঠিক একই ভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে শুধু প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এই কার্যালয়ের সকল ধরনের অনিয়মের কারসাজিতে মূল ভূমিকায় রয়েছেন ৩ জন। তার মধ্যে অন্যতম – দলিল লেখক সমিতির (সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম – সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন বকুল), সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান স্বপন। এদের চোখের ইশারায় সাব রেজিস্ট্রারের নিত্যদিনের দলিল সম্পাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অফিস শেষে রেজিস্ট্রারের খাস কামরায় ভাগ বন্টন, রেকর্ড কিপারের নকল তল্লাশিতে অনিয়ম বাড়তি টাকা লেনদেন, নৈশ প্রহরী হান্নানের অসদাচরণ। এছাড়াও সমিতির নেতৃবৃন্দ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকদের বিলাশবহুল জীবনযাপন, বিদেশগমন, (ছেলেমেয়েদের দেশের নামিদামি স্কুল কলেজে পড়াশুনা) ভিডিও ফুটেজ নিয়ে পরবর্তী ধারাবাহিক অনুসন্ধানী ধারাবাহিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হবে।

‎এ সকল অনিয়ম প্রসঙ্গে জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান’কে একাধিকার মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply