সিনিয়র রিপোর্টার জুয়েল খন্দকার:- টাইফয়েড জ্বর থেকে আপনার শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারের ইপিআই কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ থেকে টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হবে। সেই সুবাধে জনসচেতনতা, নিয়মবিধি ও কর্মকান্ডের বিষয়ে আজ কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন এর অফিসের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
টাইফয়েড জ্বর (Typhoid Fever) একটি প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে । উল্লেখ্য, আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় বসবাসকারী মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কম হলেও বাংলাদেশ-সহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।উক্ত বিষয় টায়ফয়েড টিকা ক্যাম্পেইন -২০২৫ বিষয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন”র সম্মেলন কক্ষে জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে সংবাদ সম্মেলন করেন। উক্ত সম্মেলনে আলোচনা করেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন আলীনূর মোঃ বশির আহম্মেদ, ডেপুটি সিভিল সার্জন রেজা মোহাম্মদ সারোয়ার আকবর, ডাবলুএইচও এসআইএমও ডা. শুভ চন্দ্র সাহা, আদর্শ সদর উপজেলার সুস্থ কর্মকর্তা ডা. জাকারিয়া মাহামুদ, অনুস্থান ডা. জাকিয়া আফরিন প্রমুখ।
১২ অক্টোবর/২০২৫খ্রিঃ হতে ০৪ সপ্তাহ ব্যাপী সারা দেশে “টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন/ ২০২৫” এর মাধ্যমে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী / প্রাক প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের এবং কমিউনিটির শিশুদের ০১ ডোজ TCV টিকা প্রদান করা হবে।
এক নজরে কুমিল্লা জেলার টিসিভি (টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন) টিকাদান কুমিল্লা জেলায় টিকাদান ক্যাম্পেইন হবে যেই সব এলাকায়।
১। ক্যাম্পেইনঃমোট উপজেলা- ১৭,
২। মোট ইউনিয়ন-১৯৬, মোট ওয়ার্ড- ৫৮৮
৩। মোট পৌরসভা (টিকাদান কার্যক্রমে
৪। সম্পৃক্ত)-১
৫। মোট পৌর ওয়ার্ড-৯
৬। অস্থায়ী কেন্দ্রের সংখ্যা-৪, ৭৭৬
৭। স্থায়ী কেন্দ্রের সংখ্যা-১৮
৮। টিকাদানকারীর সংখ্যা-১.১৭৬
৯। স্বেচ্ছাসেবক এর সংখ্যা-৪৮১২
১০। প্রথম সারির সুপারভাইজারের সংখ্যা-৫৮৮
১১। মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা-১০,৮৮৬
১২। মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা- ১০,০৫,৭৪৯
১৩। কমিউনিটিতে শিশুর সংখ্যা- ৫,৮০,২৭০
১৪। জেলায় মোট শিশুর লক্ষমাত্রা- ১৫,৮৬০১৯
টাইফয়েড জ্বর এর বিস্তারিত বিবরণ..
বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বর
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের হার বাংলাদেশে অনেক বেশি। The Global Burden of Disease-এর সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪,৭৮,০০০ জন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং ৮,০০০ জন মৃত্যুবরণ করে; যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই শিশু ।
টাইফয়েড জ্বর ও এর প্রভাবে
টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি (S. Typhi) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে আর্থিক ক্ষতি, দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আরও আশংকার বিষয় হলো টাইফয়েড রোগীর চিকিৎসায় যে সকল এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ টাইফয়েড জ্বর নিরাময়ে কাজ করছে না। অর্থাৎ টাইফয়েড জীবাণু সে সকল এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে, ফলে ঔষধ প্রতিরোধী টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাইফয়েড টিকা এই মারাত্মক ঔষধ প্রতিরোধী টাইফয়েড জ্বরের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
টাইফয়েড জ্বর কীভাবে ছড়ায়?
টাইফয়েড প্রধানত আক্রান্ত ব্যাক্তির মলের সংস্পর্শে আসা দূষিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে বিস্তার ঘটে এবং অন্যান্যদের মাঝে সংক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই জীবাণু একমাত্র মানুষের দেহেই অবস্থান করে এবং ২টি চক্রে বিস্তার লাভ করতে পারে:
সংক্ষিপ্ত চক্র (Short-cycle)
. দূষিত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে
. দূষিত পানি পানের মাধ্যমে এবং
. স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব থাকলে।
দীর্ঘ চক্র (Long-cycle)
• পরিবেশের দূষণ, যেমন: নর্দমার দূষিত পানি
• অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে পাইপলাইনের পানি পরিশোধন করলে।
. পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে ল্যাব
স্টাফ দ্বারা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে
. মানব মল অথবা অপরিশোধিত নর্দমার বর্জ্যকে কৃষিক্ষেতে সার হিসেবে ব্যবহার করলে।
টাইফয়েড জীবাণুর সুপ্তকাল
সাধারণত জীবাণু প্রবেশের পর গড়ে ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে টাইফয়েড জ্বর হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ৩ দিন থেকে ২ মাস পর্যন্ত হতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী
. ঘনবসতিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, বস্তি বা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী
. রোগ প্রাদুর্ভাব এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী
. মহামারিতে আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণকারী
. নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে, এমন এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী এবং
. অনিরাপদ উপায়ে বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে খাবার প্রস্তুত বা পরিবেশনকারী।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণসমূহ
. মৃদু জ্বর থেকে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মাত্রার জ্বর (১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
. ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, কাঁপুনি, ক্ষুধামন্দা, ও কাশি
. শরীর ব্যথা, পেট ব্যথা (কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থাকতে পারে বা না-ও থাকতে পারে ), বমি বমি ভাব বা বমি
. অসুখের দ্বিতীয় সপ্তাহে যকৃৎ এবং প্লীহা বড় হয়ে যেতে পারে (Hepato-splenomegaly)
. কিছু রোগীর ক্ষেত্রে র্যাশ বা শরীরে লালচে দানা থাকতে পারে।
টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫
টাইফয়েড টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা সুপারিশকৃত এবং নিরাপদ ও কার্যকর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ইপিআই-এর ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে এই টিকা প্রদান করা হবে ।
টিকাদান ক্যাম্পেইন-এর উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী
. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণি/সমমান পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রী
. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কমিউনিটির ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি সকল শিশু
কখন টিকা দেওয়া যাবে না
. জ্বর (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট-এর বেশি) হলে
. পূর্বে কোন টিকা দেওয়ার পর এলার্জির ইতিহাস
থাকলে
. টিকা গ্রহণের দিন অসুস্থ থাকলে
. গর্ভবতী/দুগ্ধদানকারী মা হলে
টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন
টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উদ্দিষ্ট সকল শিক্ষার্থী এবং শিশুদের https://vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে জন্ম নিবন্ধন সনদের ১৭ সংখ্যা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করবেন। পরবর্তীতে ঐ একই ওয়েবসাইট থেকে টাইফয়েড টিকাদান কার্ড ডাউনলোড করে টিকাদানের দিন নিয়ে
আসতে বলবেন। উল্লেখ্য, টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী যাদের ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নেই অথবা যে সকল শিক্ষার্থী ৮ম/৯ম শ্রেণিতে পড়ে কিন্তু বয়স ১৫ বছরের বেশি তাদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাস্থ্য সহকারী/টিকাদানকর্মীর সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন।