মুস্তাকিম নিবিড়ঃ
সওজ অধিদপ্তরে ঘাপটি মেরে বসে খোদ নিজ সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নিজ সার্থ চরিতার্থ করে চলছে কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারীগন, সওজ এর সফলতা কে ম্লান করতে সবসময়ই তারা প্রস্তুত। এমন সব কর্মকর্তাদের মুখোশ উন্মোচন করে চলছে সাপ্তাহিক দেশপত্র। অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় একের পর এক থলের বিড়াল উকি মাড়ছে। সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এর বিরুদ্ধে উঠছে লাগাতার অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ। মাতারবাড়ি প্রকল্পে দুর্নীতি অনিয়মের সিংহভাগ টাকাই নাকি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম তার নিজ ঘরে রাখেন, এমন কথা প্রচলিত থাকলেও ব্যাংক ভর্তি টাকার পাহাড় ও রাজধানীর সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা বসুন্ধরায় তার আলিশান ফ্ল্যাট, সেখানেই বসবাস করেন তিনি। ব্যবহার করেন অর্ধ কোটি টাকা দামের গাড়ি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় আওয়ামী লীগের সাবেক সড়ক সেতু ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গুপ্তধনের পাহারাদার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর, এমনটাই বলে থাকেন স্টক জাহাঙ্গীরের সহকর্মীরা। ইতিমধ্যে তিনি নাকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তটস্থ করেছেন, বলে বেড়াচ্ছেন “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এমন একটি সাপ যা আমার গুপ্তধনকে পাহারা দিবে” শেয়ার মার্কেটে ব্যাপক বিনিয়োগ করায় এই প্রকৌশলীকে তারি সহকর্মীরা বলে থাকেন “দ্যা স্টক কিং” অনিয়মের কারণে সড়ক সেতু মন্ত্রণালয় বারবার তদন্তের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় দেশপত্রের কাছে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু তথ্য আসতে শুরু করে, যার মধ্যে উঠে আসে নিজ সহকর্মী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে আজাদুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া তথ্য দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় প্রকাশ করানোর মতো গুরুত্বর অপরাধ। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে নিজের বদলি করানোর জন্য ঘুষ দেয়া এবং আওয়ামী চক্রের সাথে জড়িত কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার সাথে আতাত করে নিজ দফতরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার তথ্য সবারই জানা। যা সরকারি চাকরি বিধিমালার বেশ কয়েকটি ধারা ও উপধারা লংঘন করে। বসুন্ধরায় বসবাসরত সওজ সওজ প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর জানা গেছে, ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বসুন্ধরা শাখায় একটা সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন জাহাঙ্গীর আলম। বিভিন্ন সময় এই হিসাবে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা জমা হওয়ার পর সব টাকাই তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির করপোরেট শাখায় আরেকটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর। এই হিসাবে বিভিন্ন সময় ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা জমা করার পর তা তুলে নেন। ২০২১, ২০২৩, ২০২৪ সালে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি গুলশান করপোরেট শাখায় ১৮টি এফডিআর এবং একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলে জমা করেন ৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সমপরিমাণ টাকা এখনও এসব হিসাবে জমা আছে। ২০১২ সালে জাহাঙ্গীর আলম আরেকটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি প্রগতি সরণি শাখায়। এই হিসাবে ৩৮ কোটি টাকা জমা করা হয়। তুলে নেওয়া হয়েছে ৩৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০২৩, ২০২৪ সালে ১১টি এফডিআর এবং ডিপিএস হিসাব খুলে ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা জমা করা হয়। সমপরিমাণ টাকা এখনও জমা আছে। ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে আইডিএলসি ফিন্যান্স পিএলসি উত্তরা শাখায় ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ১৭টি এফডিআর করেন তিনি। এসব টাকা এখনও স্থিতি আছে। ২০২৩, ২০২৪ সালে ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকার ৩১টি এফডিআর করেছেন ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স পিএলসি গুলশান শাখা এবং প্রিন্সিপাল শাখায়। এগুলো এখনও স্থিতি আছে। ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্র্যন্ত সোনালী ব্যাংকের রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, ঠাকুরগাঁ এবং ঢাকার বারিধারা শাখায় খোলা হিসাবে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা জমা করে তা তুলে নেন জাহাঙ্গীর আলম। এসব হিসাবে তিনি মোট ১৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা লেনদেন করেন। জমা থাকা ৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা জব্দ করেছে বিএফআইইউ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম যেন ‘টাকার মেশিন’। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সড়ক উন্নয়ন অংশের প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বের পর এই কর্মকর্তার অর্থ-সম্পদও বাড়ছে বিদ্যুৎগতিতে। গত ১০ বছরে তিনি বেতন পেয়েছেন মাত্র ৯৮ লাখ টাকা। অথচ তার নামে ৭৭ এফডিআরসহ ৮২ ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেছেন ১৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। তার এই বিপুল অর্থ লেনদেন ধরা পড়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে।
জানা গেছে, নিজস্ব পদ্ধতিতে একটি ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক অর্থ লেনদেনের সতর্ক সংকেত পায় বিএফআইইউ। এরপর ওই হিসাবের সূত্র ধরে তদন্তে নামার পরই বেরিয়ে আসে ‘থলের বিড়াল’। সামনে আসে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের পরিচয়। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তার হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের চিত্র দেখে হতবাক স্বাধীন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর প্রতিবেদন তৈরি করে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে উল্লিখিত তথ্য জানা গেছে।
সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় পাঠানো বিএফআইইউর প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের তাগিদ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) বাংলাদেশের প্রচলিত আইন, বিধিবিধান ও নিয়মাবলী লঙ্ঘন করে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।
দুদকে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম।
অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি প্রকৌশলীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভর প্রদর্শন করেন।
দুদক সূত্র জানায়, অচিরেই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীরকে আইনের আওতায় আনা হবে।