প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২১, ২০২৫, ৩:৩৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ২০, ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ণ
উল্টে যাওয়া বিমান থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন তিনি
অনলাইন ডেস্ক :- উল্টে যাওয়া, আগুনে ঘেরা একটি বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার বাসিন্দা পিট কার্লেটন। কিন্তু সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। দুর্ঘটনার প্রায় ১০ মাস পরও আতঙ্ক, দুঃস্বপ্ন ও উড়োজাহাজে ভ্রমণের ভয় তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারির এক শীতল দিনে ডেল্টা কানেকশন ফ্লাইট ৪৮১৯-এ করে টরন্টো যাচ্ছিলেন নিয়মিত ভ্রমণকারী কার্লেটন। সবকিছু ছিল স্বাভাবিক—নিরাপত্তা তল্লাশি, সহকর্মীদের সঙ্গে কথা, জানালার পাশের আসন ৯ডিতে বসে প্রিয় কানাডিয়ান ব্যান্ড দ্য ট্র্যাজিক্যালি হিপ শোনা। কিন্তু অবতরণের ঠিক আগে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
কার্লেটনের ভাষায়, ‘বিমানটি খুব দ্রুত নামছিল, কিছু একটা ঠিক লাগছিল না।’ এরপরই প্রধান ল্যান্ডিং গিয়ার ভেঙে যায়। রানওয়েতে আছড়ে পড়ে বিমানটি উল্টে যায়। একটি ডানা ভেঙে পড়ে, লেজ আলাদা হয়ে যায়। তিনি বলেন, যাত্রীরা সিটবেল্টে ঝুলে পড়েন—‘বাদুড়ের মতো’।
অলৌকিকভাবে ওই ফ্লাইটের প্রতিটি যাত্রীই প্রাণে বেঁচে যান। তবে অভিজ্ঞতার ভয়াবহতা কার্লেটনের মনে গেঁথে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি অসম্ভব ভাগ্যবান… কিন্তু সেই দৃশ্যগুলো এখনও আমাকে আতঙ্কিত করে।’
দুর্ঘটনার সময় জানালার বাইরে আগুনের শিখা, বিমানের ধাতব কাঠামোর তীব্র শব্দ এবং মাথায় আঘাত—সবকিছু এখনো স্পষ্ট মনে আছে তার। আগুন ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে ডান পাশের ডানা ভেঙে গেলে আগুন হঠাৎ মিলিয়ে যায়। পরে যাত্রীরা একে অপরকে সাহায্য করে উল্টে থাকা বিমান থেকে বেরিয়ে আসেন।
কার্লেটন নিজে আহত অবস্থায় বিমানের ছাদে পড়ে যান। জেট ফুয়েলে ভেজা শরীরে তিনি অন্য যাত্রীদের বের হতে সহায়তা করেন। দুর্ঘটনার সময় বিমানে প্রায় ৬ হাজার পাউন্ড জ্বালানি ছিল বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানানো হয়। দুর্ঘটনার কারণ এখনো তদন্তাধীন।
বিমান থেকে বের হওয়ার পর তিনি দেখেন, দমকলকর্মীরা ঝাঁপ দেওয়ার পরপরই ধ্বংসস্তূপের একটি অংশে বিস্ফোরণ ঘটে—যে পথ দিয়ে তিনি কয়েক মুহূর্ত আগেই বেরিয়েছিলেন।
সবকিছু হারিয়ে ফেলেন তিনি—মোবাইল, ওষুধ, লাগেজ। হাসপাতালে না গিয়ে অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে বাসে করে টার্মিনালে যান। কেউ কাঁদছিলেন, কেউ স্তব্ধ। তবে সবাই সবার খোঁজ নিচ্ছিলেন।
সেই রাতেই মানবিকতার অভিজ্ঞতা পান কার্লেটন। অপরিচিত একজন তার খাবারের বিল পরিশোধ করেন। হোটেলে এক ব্যক্তি খবর দেখে তাকে নিজের সোয়েটশার্ট দেন। সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে আসা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় পোশাক ও সামগ্রী কিনে দেয়।
ডেল্টা এয়ারলাইন্স পরে প্রত্যেক যাত্রীকে শর্তহীন ৩০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়। বর্তমানে প্রায় ৫৫ জন যাত্রী ডেল্টা ও এন্ডেভার এয়ারের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন।
আজও দুর্ঘটনার প্রভাব কাটেনি কার্লেটনের জীবনে। শীতের তীব্র বাতাস বা তুষারপাত তাকে আবার ফিরিয়ে নেয় সেই রানওয়েতে। ঘুমের মধ্যে আগুন দেখেন। কানে কম শোনেন, কথাবার্তাতেও পরিবর্তন এসেছে। স্ত্রী ক্যারোলিন বলেন, ‘সে শুনছে, কিন্তু ঠিকভাবে বুঝছে না।’
এখনও কাজ করছেন কার্লেটন, তবে ভ্রমণ বন্ধ রেখেছেন। একা বিমানে উঠতে পারেন না। ভবিষ্যতে ট্রেনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। অবসরের পর বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা আছে, তবে শীতকালে বিমান ভ্রমণ নয়।
নতুন জীবনের অর্থ খুঁজতে তিনি মিনেসোটার একটি র্যাপ্টর সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন—পাখি সংরক্ষণে কাঠমিস্ত্রির কাজ। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই।’
বেঁচে ফেরার জন্য কৃতজ্ঞ হলেও প্রশ্ন তাকে তাড়া করে বেড়ায়—‘আমি কেন বেঁচে গেলাম? এখন আমার কী করা উচিত?’
সূত্র: সিএনএন
প্রধান সম্পাদক : জুয়েল খন্দকার
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : এস এম রাশেদ হাসান
নির্বাহী সম্পাদক : গাজী ওয়ালিদ আশরাফ সামী
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : ১০/৩, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা-১০০০
হট-লাইন নাম্বার : ০১৯৮৮৬৬৩৭৮২, ০১৯৬৭৯৯৯৭৬৬.
Copyright © 2025 দেশপত্র. All rights reserved.