লেখক: সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র রিপোর্টার,
ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টিং সেল, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সম্পাদক দৈনিক দেশবাংলা।
আহারে সাংবাদিক, আহারে সাংবাদিকতা! সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, মনগড়া সংবাদ ছাপাতে এতটাই উৎসাহী থাকেন সাংবাদিকরা যা অন্য কোনো পেশায় বিন্দুমাত্র নজির দেখতে পাওয়া যায় না। মূলত সাংবাদিক হিসেবে অপর সাংবাদিকের প্রতিহিংসা, বিরোধ, আক্রোশের কারণেই বেশিরভাগ সংবাদ প্রকাশের নজির বিদ্যমান। কিন্তু খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় যা ঘটলো তা কোন ক্রাইটেরিয়ায় ফেলবো সেটি খুঁজে পাচ্ছি না।
সেখানে দৈনিক কালের প্রতিচ্ছবি পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক হাসান আল মামুন ও তার পরিবারের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তার গাড়ি আটকায় এবং গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করে হাসান আল মামুন, তার স্ত্রী রত্না হাসান ও মেয়ে জান্নাত কে টেনে হিঁচড়ে নামায়। তারা রড, পাইপ, লাঠিসোটা দিয়ে সবাইকে বেধড়ক মারধোর করে এবং হাসান আল মামুনকে রীতিমত হত্যার অপচেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনায় মামলা হয়েছে, আসামি গ্রেফতারে পুলিশ অভিযানের পর অভিযান চালাচ্ছে। সে খবরটি প্রকাশের ব্যাপারে ওই উপজেলার সংবাদদাতাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, ছিলও না। কিন্তু তাদের আগ্রহ ছিল ভিন্ন জায়গায়।
একজন সম্পাদকসহ তার পরিবারের উপর ন্যাক্কারজনক হামলাকারীদের সরাসরি পক্ষ নিলেন স্থানীয় সংবাদদাতারা। তারা অভিযুক্তদের কথিত এক সংবাদ সম্মেলন দেখিয়ে একপেশে সংবাদ প্রস্তুত করে নিজেদের নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ করলেন। যদিও প্রথম শ্রেনীর কোনো পত্রিকায় সে সংবাদকে পাত্তাও দেয়া হয়নি। তারা প্রকাশিত সংবাদে কি বোঝাতে চাইলেন তা আমার মত অল্প শিক্ষিত পাঠক বুঝতেই পারলাম না। সে সংবাদে একবার বলতে চাইলেন যে, এলাকার একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করিয়ে দেয়ার জের হিসেবে ওই সম্পাদকের উপর হামলা হয়েছে। আবার বললেন, এলাকার লোকজনের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী আহত সম্পাদক হাসান আল মামুনের মাথায় এক ইঞ্চি পরিমান গভীর এবং আড়াই ইঞ্চি দীর্ঘ ক্ষত থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ রক্তক্ষরণ হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। বলা হয়েছে এ আঘাত ভারি লৌহ দন্ডের। হাতাহাতির ঘটনায় বুঝি এমন ক্ষত হয়?
তাছাড়া ঘটনাস্থলে পুরুষ হিসেবে হাসান আল মামুন, মহিলা হিসেবে তার স্ত্রী রত্না হাসান এবং তার চার শিশু সন্তান ছিল গাড়িতে। অপরপক্ষে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, রড, লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে অপেক্ষারত ছিল ১২/১৩ জন হামলাকারী। একজনের সঙ্গে ১২/১৩ জনের মারামারি হয় কখনও? নাকি ১২/১৩ জন মিলে একজনের উপর হামলা চালায়?
সংবাদ সম্মেলনে এটুকু যৌক্তিকতা বুঝতে না পারলে, তা নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারলে সেই সংবাদ সম্মেলন কাভারেজ দেয়ার এতো দায়বদ্ধতা পেলেন কোত্থেকে? সংবাদ সম্মেলন আর প্রেস রিলিজ এক কথা নয়। সেখানে অযৌক্তিক বা মিথ্যা তথ্য কেউ গেলানোর চেষ্টা করলে সাংবাদিককে অবশ্যই তা প্রশ্ন তুলতে হবে এবং ক্রসচেক করতে হবে। ক্রসচেকের নামে কেউ কেউ আহত সম্পাদক হাসান আল মামুনের যে মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, রক্তাক্ত জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিতসাধীন থাকাকালে কাউকে কোনো রকম বক্তব্য দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। তাহলে কি দাঁড়ালো?
আপনি বস্তুনিষ্ঠ হবেন, সত্যবাদী হবেন, আপসহীন হবেন- তাই বলে নিজ পেশার আরেক ভাইয়ের প্রতি আপনার বিন্দুমাত্র দায়বোধ, মমত্ববোধ থাকবে না? আপনি তার উপর হামলার ঘটনাকে মারামারি হিসেবে প্রচার করবেন, রক্তাক্ত একজন সাংবাদিকের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনবোধ করবেন না, একজন সম্পাদককে কথিত সম্পাদক হিসেবে পরিচিত করার পাঁয়তারা চালাবেন,,, এটাই বুঝি সাংবাদিকতার বিবেক? এটাই বস্তুনিষ্ঠতা?
সাংবাদিকদের ব্যক্তি বিরোধ, আক্রোশ, প্রতিহিংসার কারণেই বারবার হামলা, নির্যাতন, হয়রানির ধকলে পড়ে আর প্রতিবারই কিছু দালাল সাংবাদিকের চেহারা উন্মোচিত হয়। আপনি, আমি সেই কাতারভুক্ত হয়ে পড়ছি কি না সেটাও ভেবে দেখার বিষয়