বিশেষ প্রতিবেদনঃ
সওজ এর ধূর্ত প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম চাকুরী জীবনে বিভিন্ন সময়ে ঠাকুরগাঁও, গোপালগঞ্জ ও রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সড়ক উন্নয়ন অংশের পিডি। ব্যাংক বিবরণীর হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে প্রকল্প পরিচালক হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তার নামে বেতন ভাতা বাবদ জমা হয়েছে ৯৮ লাখ টাকা। অথচ, তার নামে ৭৭টি এফডিআরসহ মোট ৮২ আমানত হিসাবে (৫টি সঞ্চয়ী ও ৭৭টি স্থায়ী আমানত) লেনদেন হয়েছে ১৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম সরকারের দায়িত্বশীল পদে কর্মরত। দুর্নীতির মাধ্যমে তার অবৈধ আয়ের অর্থ এসব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ৭৭টি স্থায়ী আমানত হিসাবে এখনো ৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা জমা থাকলেও তিনি আয়কর বিবরণীতে মাত্র ৪ কোটি ১০ লাখ টাকার নিট সম্পদ প্রদর্শন করেছেন। এতে আয়কর ফাঁকির মাধ্যমে তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মালিক হয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়। ব্যাংক হিসাবে দেখা যায়, ২০১২ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত হিসাবগুলোতে ৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা জমা এবং ৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা তোলা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের ৭ অ্যাকাউন্টে জমা আছে ৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
জানা গেছে, বসুন্ধরায় বসবাসকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বসুন্ধরা শাখায় একটা সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন জাহাঙ্গীর আলম। বিভিন্ন সময় এই হিসাবে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা জমা হওয়ার পর সব টাকাই তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির করপোরেট শাখায় আরেকটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর। এই হিসাবে বিভিন্ন সময় ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা জমা করার পর তা তুলে নেন। ২০২১, ২০২৩, ২০২৪ সালে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি গুলশান করপোরেট শাখায় ১৮টি এফডিআর এবং একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলে জমা করেন ৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সমপরিমাণ টাকা এখনও এসব হিসাবে জমা আছে। ২০১২ সালে জাহাঙ্গীর আলম আরেকটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি প্রগতি সরণি শাখায়। এই হিসাবে ৩৮ কোটি টাকা জমা করা হয়। তুলে নেওয়া হয়েছে ৩৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০২৩, ২০২৪ সালে ১১টি এফডিআর এবং ডিপিএস হিসাব খুলে ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা জমা করা হয়। সমপরিমাণ টাকা এখনও জমা আছে। ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে আইডিএলসি ফিন্যান্স পিএলসি উত্তরা শাখায় ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ১৭টি এফডিআর করেন তিনি। এসব টাকা এখনও স্থিতি আছে। ২০২৩, ২০২৪ সালে ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকার ৩১টি এফডিআর করেছেন ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স পিএলসি গুলশান শাখা এবং প্রিন্সিপাল শাখায়। এগুলো এখনও স্থিতি আছে। ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্র্যন্ত সোনালী ব্যাংকের রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, ঠাকুরগাঁ এবং ঢাকার বারিধারা শাখায় খোলা হিসাবে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা জমা করে তা তুলে নেন জাহাঙ্গীর আলম। এসব হিসাবে তিনি মোট ১৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা লেনদেন করেন। জমা থাকা ৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা জব্দ করেছে বিএফআইইউ। সওজ প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাংক হিসাবে ১৩৮ কোটি টাকা লেনদেন ও এফডিআরের ৩০ কোটি টাকার উৎস দুর্নীতি কিনা তা যাচাই করা দরকার বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। দুদক সূত্র জানায় দ্রুত অভিযোগ তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে। বোদ্দজনেরা মনে করছেন দ্রুত দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে লুণ্ঠিত টাকা সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে দেয়া হোক।