কুমিল্লা প্রতিনিধি:- চৌদ্দগ্রাম প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুদকে, টেন্ডারে অনিয়ম, কমিশন বাণিজ্য ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ!
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে টেন্ডারে স্বজনপ্রীতি, কমিশন বাণিজ্য, অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কাজী ফখরুল ইসলাম তাঁর
অভিযোগে বলা হয়, “পুকুর খাল উন্নয়ন” শীর্ষক জাতীয় প্রকল্পের আওতায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ধনুসাড়া মিজির ব্রিজ থেকে সিংরাইশ ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার কানাইল খাল পুনঃখনন প্রকল্পে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৮১ হাজার ১০১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এই কাজের কার্যাদেশ ২০২৪ সালের ২ আগস্ট কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ‘মেসার্স লিবার্টি ট্রেডার্স’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। কার্যাদেশে খাল পুনঃখননের পাশাপাশি দুই পাড় বাঁধাই ও অতিরিক্ত মাটি উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রির শর্ত ছিল। এছাড়া, দুই পাড়ে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানোরও নির্দেশনা ছিল।
কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালের পাড় না বেঁধেই স্থানীয় একটি চক্র ও উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যোগসাজশে রাতে ট্রাক্টরপ্রতি ২০০ টাকা হারে খালের মাটি বিক্রি করতে থাকে।
এতে স্থানীয় জমির মালিকদের সাথে একাধিকবার উত্তেজনা ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) চলতি বছরের ২৫ মার্চ কার্যাদেশটি বাতিল করেন।
তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রকৌশলী নুরুজ্জামান একদিকে কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করলেও অন্যদিকে কাজ শেষ হয়েছে মর্মে ২ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার ১৫৬ টাকার চূড়ান্ত বিল পরিশোধের জন্য গত ১৯ জুন নির্বাহী প্রকৌশলী, কুমিল্লা বরাবর চিঠি পাঠান। তার এই দ্বিমুখী আচরণে স্থানীয় ঠিকাদারসহ জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, খালের পাড়ে ২-৩ হাজার গাছ লাগানোর কথা থাকলেও মাত্র ২০-৩০টি গাছ লাগানো হয়েছে। বাকি টাকার একটি বড় অংশ প্রকৌশলী নুরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টরা ভাগবাটোয়ারা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
পূর্বের দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল চৌদ্দগ্রামে যোগদানের পর থেকেই প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের তহবিলের টাকা তছরুপ, এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, এবং ঠিকাদারি সিন্ডিকেট গঠনের অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।
সাবেক এমপি মুজিবুল হকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ব্যবহার করে তিনি নানা প্রকল্পের কার্যাদেশ ও বিল আদায়ে প্রভাব খাটিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
উপজেলা পরিষদের গেট নির্মাণেও নিম্নমানের কাজ ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অনেক কর্মকর্তা ও ঠিকাদার নুরুজ্জামানের প্রভাবের কারণে মুখ খুলতে সাহস পাননি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ঘোলপাশা ইউনিয়নের হাজী গ্রামের মো. শাহজাহান বলেন,
“এক চোর পালাইছে, আরেক চোর খাল খননের নামে গাছ না লাগিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট করছে। এসব চোরকে আইনের আওতায় না আনলে দেশ চোরের খনিতে পরিণত হবে।”
মুন্সিরহাট ইউনিয়নের পেঁচাইমুড়ি গ্রামের মো. ওমর ফারুক বলেন,
“রাতের আঁধারে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছে। গাছ লাগানোর নামে প্রতারণা করেছে। আমরা এই ঘুষখোর প্রকৌশলীর বিচার চাই।”
অভিযোগকারী কাজী ফখরুল ইসলাম জানান,
“খালের পাড়ে মাত্র ২০-৩০টি গাছ লাগিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জামাল হোসেনের মাধ্যমে দুদকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।”
প্রশাসনের অবস্থান চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জামাল হোসেন বলেন,“অভিযোগের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী নুরুজ্জামান কোনো মন্তব্য না করে সাংবাদিককে চা খাওয়ার দাওয়াত দেন।
প্রধান সম্পাদক : জুয়েল খন্দকার
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : এস এম রাশেদ হাসান
নির্বাহী সম্পাদক : গাজী ওয়ালিদ আশরাফ সামী
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : ১০/৩, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা-১০০০
হট-লাইন নাম্বার : ০১৯৮৮৬৬৩৭৮২, ০১৯৬৭৯৯৯৭৬৬.
Copyright © 2025 দেশপত্র. All rights reserved.