সিনিয়র রিপোর্টার বিশাল রহমান :- ঠাকুরগাঁওয়ে টানা চার দিনের প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জেলার কৃষকেরা গভীর দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। একটানা চার দিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এবং হঠাৎ দমকা বাতাসের কারণে জেলার আমন ধান এবং সদ্য রোপণ করা আলু ফসল চরম ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়েছে।
রবিবার ২-রা নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে করুন এই কৃষি চিত্র।
ঠাকুরগাঁও সদর, ভুল্লী, রুহিয়া, হরিপুর, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ সহ সব উপজেলায় কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট।
বিশেষ করে যেসব কৃষক তাদের পাকা আমন ধান কাটার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তারা এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। একটানা বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ার দাপটে পাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়ছে। বৃষ্টিতে ভিজে ধান নষ্ট হওয়ার এবং ওজন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষীরা। পাশাপাশি, সদ্য রোপণ করা আলু ক্ষেত নিয়েও কৃষকদের উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টি আলুর চারার বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে এবং পচন ধরানোর কারণ হতে পারে।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যদি আবহাওয়া দ্রুত স্বাভাবিক না হয়, তবে এই ক্ষতি বিপুল পরিমাণে আর্থিক সংকটে ফেলতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষকদের সহায়তার দাবি জানাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, যেসব জমিতে আমন ধানে থোর দেখা দিয়েছে এবং ধানের শীষ বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে সেসব জমিতে রসের ঘাটতি পূরণ হওয়ায় সহজে ধান বের হতে পারবে এবং এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সহস্রাধিক হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষকদের সহযোগিতার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ঠাকুরগাঁওয়ের ডেবাডাংগী লক্ষিপুর এলাকায় নষ্ট হওয়া ধান খেতের দিকে বিষন্ন মনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, প্রান্তিক বর্গাচাষি আলাউদ্দিন আলী,তাঁকে ক্ষতির বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পরেন তিনি। সার,কীটনাশক, বীজ বাকিতে নিয়ে অন্যের দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে নিজের স্বপ্ন বুনেছিলেন আলাউদ্দিন কিন্তু নিষ্ঠুর প্রকৃতির কাছে আজ পরাজিত সে। একইরকম অবস্থা সদর উপজেলার মেলানি এলাকার কৃষক সহিজউদ্দীনের।তাঁর পাঁচ বিঘা জমির ধান ও ছয় বিঘা জমির আগাম আলু বিনষ্ট হয়েছে প্রাকৃতিক তান্ডবে।
কাঁদো শুকা কান্দরে সফিজুল ইসলামের দশ বিঘা জমির ধান পুরোপুরি শেষ। কথা হয় সফিজুলের ছেলে সাহেব আলীর সাথে। সাহেব আলী জানান, হেমন্তের এই সময়টাতে আমরা স্বপ্ন দেখি,স্বপ্ন বুনি কিন্তু প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার কাছে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। এসময়টায় এলাকার কৃষকদের মাঝে একটা ফুর্তির ভাব থাকার কথা থাকলেও এবার আর তাদের মনে সেই ফুর্তি নেই। দেশের কৃষকদের জন্য শস্যবীমা চালু থাকলে হয়তো তাদের ক্ষতিটা পুষিয়ে উঠা সম্ভব হতো। বাংলাদেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে স্বীকৃত ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকদের এবারের ক্ষতি নিরুপণ করে দ্রুততম সময়ে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল হোসেন।
প্রধান সম্পাদক : জুয়েল খন্দকার
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : এস এম রাশেদ হাসান
নির্বাহী সম্পাদক : গাজী ওয়ালিদ আশরাফ সামী
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : ১০/৩, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা-১০০০
হট-লাইন নাম্বার : ০১৯৮৮৬৬৩৭৮২, ০১৯৬৭৯৯৯৭৬৬.
Copyright © 2025 দেশপত্র. All rights reserved.