দেশপত্র ডেস্কঃ
বাংলাদেশের আইন যে সাংবাদিকবান্ধব নয়—তা রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের বক্তব্যে আবারও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, সাংবাদিক নিবর্তনের জন্য রাষ্ট্র অনেক রকম পথ খোলা রেখেছে। বলা হয়, আকাশে যত তারা—আইনে তত ধারা। সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে আকাশের সব তারার মতো ধারা প্রয়োগ করা হয়।
সোমবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’ সম্মেলনের তৃতীয় দিনের এক পর্বে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই পর্বের বিষয় ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ: ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার শিক্ষা।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তী বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইনের উদাহরণ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন— ক্ষমতায় যে-ই আসুক, তারা সাংবাদিক নিবর্তনের মানসিকতা ধরে রাখে।
সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী, ট্রায়াল ওয়াচের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার মানেকা খান্না এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার শিকার বরিশালের সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী, ময়মনসিংহের সাংবাদিক আব্দুল কাইউমসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের পর আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরাসরি প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন— ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছিল সবার সঙ্গে প্রতারণা। এর অপপ্রয়োগে সাংবাদিকরা ভীষণভাবে হয়রানি হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যে আইন কণ্ঠরোধ করে, সাংবাদিকের কলম থামিয়ে দেয়—এ ধরনের আইনের অবসান চাই। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা, এসব আইন যাতে আবার ফিরতে না পারে।
আইন সংশোধন বা বাতিল করলেই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন— রাষ্ট্রের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে ভয়হীন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
দিনাজপুরের এক কিশোরীর মামলায় সুপ্রিম কোর্টের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন— আইন পরিবর্তন করলেই সব সমস্যার সমাধান আসে না—প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
বাংলাদেশে ভয়হীন পরিবেশের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন— বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোনো গুমের ঘটনা ঘটেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও অনেক কমেছে। গত ১৭ মাসে পুলিশ একটিও গায়েবি মামলা করেনি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার নিবর্তনমূলক আইনের পথে ফিরে যাবে না এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নীতি আর গ্রহণ করবে না।


