স্টাফ রিপোর্টার :- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে কৃষিজমিতে অবৈধ ড্রেজার ব্যবহার এবং ভেকু দিয়ে মাটি কাটার মাধ্যমে জমি বিনষ্টের অভিযোগ ছিল। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে প্রভাবশালী একটি চক্র রাতের অন্ধকারে এসব কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এতে একদিকে যেমন উর্বর কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছিল, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছিল স্থানীয় পরিবেশ, কৃষকের জীবিকা এবং পুরো এলাকার জলাধার ও মাটির স্বাভাবিক ভারসাম্য। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর ২০২৫) জেলা প্রশাসক সরেজমিনে ইব্রাহিমপুর এলাকায় হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানের সময় তাঁর নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা, মাঠকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থেকে অবৈধ ড্রেজার ও পাইপ লাইন ভাঙচুর করেন। অভিযানে স্থানীয়ভাবে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে পরিচিত মোঃ বাসিরের মালিকানাধীন অবৈধ ড্রেজার মেশিন, লম্বা পাইপলাইন এবং মাটি টানার সরঞ্জাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়। একই সময়ে ওমানপ্রবাসী বাবুল মিয়ার বাড়ির পাশে মোঃ কাউছার মিয়া ও করিম মিয়ার মালিকানাধীন জমিতে ভেকু দিয়ে চলমান মাটি কাটার কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অবৈধ ড্রেজার ভাঙার সময় স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানান, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও এসিল্যান্ড অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে কৃষিজমি কাটার সুযোগ পেয়ে আসছে। অভিযোগ অনুযায়ী, রাতের অন্ধকারে মাটি কেটে নেওয়া হয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে কার্যক্রম চালানো যায়। স্থানীয়রা জানান, এভাবে ক্রমাগত কৃষিজমি কাটার ফলে—জমির প্রাকৃতিক গঠন নষ্ট হচ্ছে, ভূমি উচ্চতা ও গঠন পরিবর্তিত হওয়ায় পাকা ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ছে, জমিতে পানি আটকে ফসল নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশে সৃষ্টি হচ্ছে মাটি ক্ষয় ও জলাবদ্ধতা।
অনেক কৃষক অভিযোগ করেন, একের পর এক জমি কেটে নিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে, আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। স্থানীয় কৃষক জুলহাস মিয়া বলেন—আমাদের জমি বারবার কেটে নিয়ে যায়। ধানের জমি এখন প্রায় অনুপযোগী হয়ে গেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে স্থায়ীভাবে নজরদারি ও কঠোর শাস্তি চাই। অন্য একজন কৃষক বলেন—যারা প্রভাবশালী, তারা টাকার প্রভাব দেখিয়ে সবকিছুই ম্যানেজ করে নেয়। ফলে সাধারণ কৃষকের ক্ষেত নষ্ট হলেও কেউ শোনে না। আজকের অভিযানে আমরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি। অভিযান শেষে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, কৃষিজমি নষ্টের বিরুদ্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন—কেউ প্রভাবশালী হলেও ছাড় দেওয়া হবে না।
কৃষিজমি রক্ষায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও অভিযান চলবে। যারা আইন ভঙ্গ করে ড্রেজার চালাবে কিংবা জমি কাটবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, পরিবেশ ও কৃষিজমি রক্ষায় স্থানীয় জনসাধারণকেও প্রশাসনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।


