শিরোনাম
বাংলাদেশ হবে ইসলামের দেশ, রংপুরে চরমোনাই পীর কথা সাহিত্যের রাজপুত্র নিভৃতচারী লেখক জিল্লুর রহমান ভাঙ্গুড়ায় নকল দুধ তৈরির কারখানা আবিষ্কার : অভিযোগে ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড আজ ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত দিবস খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের দোয়া মাহফিল খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দক্ষিণ গুনাইঘর ইউপি ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল রাণীশংকৈল সার বিতরণে হট্টগোল কৃষি কর্মকর্তা হাসপাতালে  ঈশ্বরদীতে পিস্তল হাতে তুষার গ্রেফতার;উদ্ধার অস্ত্র অবৈধ খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২০০৬ মামলা

কথা সাহিত্যের রাজপুত্র নিভৃতচারী লেখক জিল্লুর রহমান

Chif Editor

বিশাল রহমান, সিনিয়র রিপোর্টার :-  প্রচার প্রচারণার মোহকে এড়িয়ে একাগ্র চিত্তে অবিরত লিখে চলেছেন উপন্যাস,কিশোর উপন্যাস, কবিতা ও টেলিভিশনের নাটক।এই সময়ের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক জিল্লুর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে।বর্তমানে তিনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মসূত্রে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করার ফলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মিলিত হয়েছেন। আর মানুষের সাথে অবলীলায় মিলিত হওয়ায় বিচিত্র অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন।আর তাঁর সেই অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরতে কলম আর কাগজ নিয়ে একাগ্র চিত্তে একের পর এক উপন্যাস, কিশোর উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ এবং টেলিভিশন নাটক লিখেছেন।

১৮৬৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন কথা সাহিত্যিক জিল্লুর রহমান।তাঁর বাবার নাম ইউনুস আলী ও মায়ের নাম মরিয়ম নেছা। মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ধর্মপুর ইউসি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি,বিরল কলেজ থেকে এইচএসসি এবং দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম বিভাগে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন করে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন।

ইট,বালি,সিমেন্ট, রড এসব জগত নিয়ে দিনময় ব্যস্ত সময় পার করে ঘরে ফিরেই লিখতে বসে যান কাজ পাগল এই কথা সাহিত্যিক। ছাত্র জীবনে দিনাজপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক তিস্তা ও দৈনিক উত্তরবাংলা পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয় তাঁর লেখালেখির জীবন। ২০০৫ সালে”ভেলেনটাইন ডেকে” উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে রচনা করেছেন ৭ টি কিশোর উপন্যাস, ১৮ টি উপন্যাস, ১ টি কাব্যগ্রন্থ,২ টি গল্পগ্রন্থ, তিন পর্বের ধারাবাহিক উপন্যাসসহ এ পর্যন্ত ৩১ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন এই কালজয়ী কথা সাহিত্যিক।এছাড়া তাঁর লেখা গল্প অবলম্বনে”একজন কবি আব্দুর রাজ্জাক” ও একুশে টিভিতে”ব্যাপারটা ভয়ংকর” প্রচারিত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো দাগ,দুঃখবিলাস,সিক্রেট ডায়েরি,খুঁজে ফিরি তারে,তবুও আমি তোমার এবং ঘোর,এবং উল্লেখযোগ্য কিশোর উপন্যাসগুলো হলো মাষ্টারমাইন্ড,জলবায়ু কণ্যা ও সেই ছেলেটি। তাঁর লেখাতে মানুষের জীবনের প্রেম,বিরহ,হাসি-কান্না, সুখ-দূঃখ,প্রাপ্তি -অপ্রাপ্তি উঠে এসেছে নিখুঁতভাবে। দেশসেরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্বেষা প্রকাশনী থেকে তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলো মানুষের জীবনের সাথে মিলে যায় বলেই পাঠকের হ্রদয়ে গেঁথে যায়। পাঠকের কল্পনার জগতে ঢুকে পরার মতো অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে তাঁর সৃষ্টি করা চরিত্রগুলোতে। দীর্ঘদিন ধরে পোশাক শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা শ্রমিক নেত্রী নাজমা বেগম বলেন, কথা সাহিত্যিক জিল্লুর রহমান রচিত উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমাদের জীবনের সাথে মিলে যায় বলেই তাঁর লেখা উপন্যাস বারবার পড়ি।দিনাজপুরের প্রবীণ সাংবাদিক মতিউর রহমান কথা সাহিত্যিক জিল্লুর রহমান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, তাঁর লেখনি শক্তি সত্যিই এক বিস্ময়। দৈনন্দিন জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা সুন্দর ও সাবলীলভাবে তুলে ধরার ঈর্ষণীয় সৃজনশীলতার ছাপ পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। তাঁর রচিত কিশোর উপন্যাস নিয়ে কথা হয় রংপুর সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী ইলিয়াসুর রহমানের সাথে। এই তরুণ জানায়, কথা সাহিত্যিক জিল্লুর রহমানের কিশোর উপন্যাসগুলো বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। একই কথা বলেছেন, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী জুলিয়াস কুজুর। তিনি বলেন, তাঁর রচিত জলবায়ু কণ্যা ও মাষ্টারমাইন্ড পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। ঠাকুরগাঁওয়ের বিশিষ্ট সমাজ চিন্তক ও কলামিস্ট আজমল রানা বলেন,নিজের সৃষ্টি করা চরিত্রগুলোকে পাঠকের স্বপ্নে নিয়ে যাওয়ার অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী কথা সাহিত্যিক জিল্লুর রহমান। তাঁকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও নাগরিক উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি সত্য প্রসাদ ঘোষ নন্দন বলেন, তাঁর রচিত কিশোর উপন্যাস জলবায়ু কণ্যা পড়ে আমি তাঁর লেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। সমসাময়িক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে আগামী প্রজন্ম তথা কিশোর তরুণদের উদ্ভুদ্ধ করতে জলবায়ু কণ্যা ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তিনি একই সাথে জলবায়ু কণ্যাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।চাপাই নবাবগঞ্জের তরুণ সাংবাদিক মোহাম্মদ আলমগীর কথা সাহিত্যিক জিল্লুর রহমানের প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর উপন্যাসে নিজেকে খুঁজে পাই,নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া দৈনন্দিন নানা সমস্যা, সুখ-দুঃখ,আনন্দ-বেদনা,হাসি-কান্না তাঁর লেখনীতে চিত্রিত হয় নিখুঁত শৈল্পিক দক্ষতায়।সে কারণেই বারবার পড়ার পরেওমতৃষ্ণা মেটেনা।

বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া আর অবাধ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তিনি প্রচার প্রচারণা থেকে দূরে নিভৃতচারী হিসেবেই থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।কথা সাহিত্যের রাজপুত্র লেখক জিল্লুর রহমানের সাথে কথা হয় তাঁর দপ্তরে। সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত লেখক জিল্লুর রহমান পেশাগত জীবনে একজন প্রকৌশলী। সারাক্ষণ ইট,বালি,সিমেন্ট, রড এসব নিয়ে ব্যস্ত থেকেও কিভাবে এত সুন্দর সুন্দর উপন্যাস আর কিশোর উপন্যাস রচনার দিকে ধাবিত হলেন, তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, প্রতিটি মানুষই কোন না কোন নেশায় আসক্ত। আমার আসক্তিটা এসবেই। নিজেকে নিয়ে প্রচার প্রচারণা না চাওয়া এই লেখক জিল্লুর রহমানের সৃজনশীলতার জগৎটা ছড়িয়ে পরুক আমাদের সামাজিক মননে।মোবাইল আসক্তির এই যুগে দেশের প্রতিটি কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণীদের হাতে হাতে শোভা পাক বই।পাড়ায় মহল্লায় গড়ে উঠুক পাঠাগার এরকমই এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন কথা সাহিত্যের রাজপুত্র লেখক জিল্লুর রহমান।

Leave a Reply