গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার ভূমিকম্প দেখছে ঢাকা ও আশপাশের মানুষ। একের পর এক ভূমিকম্পে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সবাই। ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভোরে আবারও ৪ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প দেখেছে দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—ঢাকার খুব কাছেই সক্রিয় হচ্ছে একটি নতুন ভূমিকম্প উৎস, যার প্রভাব দিনে দিনে বাড়ছে।
পর্যালোচনা কররে দেখা যায়, প্রথম বড় আঘাতটি আসে ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী, যা রাজধানী থেকে মাত্র ২৫–৪০ কিলোমিটার দূরে। ফলে মুহূর্তেই কম্পন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায়।
এর প্রভাবে আফটার শক হিসেবে মাত্র দুই সপ্তাহে ঢাকায় অন্তত সাত দফা কম্পন অনুভূত হয়েছে, যার ছয়টির উৎসই নরসিংদী।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, একই স্থান থেকে বারবার কম্পন হওয়া আফটারশক হিসেবে স্বাভাবিক হলেও ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ২২ নভেম্বর সকালে পলাশে ৩.৩ মাত্রার কম্পন, একই দিন সন্ধ্যায় ৪.৩ এবং ৩.৭ মাত্রার দু’টি কম্পন এবং ২৭ নভেম্বর ঘোড়াশালে ৩.৬ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করা হয়। সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ শিবপুর থেকে ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প আবারও ঢাকাকে কাঁপিয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ছোট ও মাঝারি মাত্রার কম্পন বড় ভূমিকম্পের সতর্ক সংকেত হতে পারে। কারণ সক্রিয় প্লেট সীমান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ। দেশের সম্ভাব্য দুটি বড় ভূমিকম্প উৎস হলো ডাওকি ফল্ট—যা শিলং মালভূমি থেকে ময়মনসিংহ, জামালগঞ্জ হয়ে সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত—এবং আরাকান ফল্ট, যা সিলেট থেকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত এবং সেখান থেকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা পর্যন্ত প্রসারিত। বিশেষজ্ঞরা আরাকান ফল্টকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করছেন।
গবেষণায় ঢাকার ১৫টি এলাকা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে: সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সুত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদি, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, খিলগাঁও এবং বাড্ডা। ৩২টি এলাকার ভৌত কাঠামোর মূল্যায়নে দেখা গেছে, পুরান ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চল তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ; তবে উত্তরাংশের কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, মানিকদি ও গাবতলীও উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ভবন জরিপ পরিচালনা, ভূমিকম্প সহনশীল নকশায় নির্মাণ নিশ্চিত করা এবং নাগরিকদের সচেতন করতে নিয়মিত মহড়া চালানোর। তাদের মতে, সময়মতো প্রস্তুতি ও সচেতনতা বড় ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনতে পারে।
প্রধান সম্পাদক : জুয়েল খন্দকার
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : এস এম রাশেদ হাসান
নির্বাহী সম্পাদক : গাজী ওয়ালিদ আশরাফ সামী
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : ১০/৩, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা-১০০০
হট-লাইন নাম্বার : ০১৯৮৮৬৬৩৭৮২, ০১৯৬৭৯৯৯৭৬৬.
Copyright © 2025 দেশপত্র. All rights reserved.