সিনিয়র রিপোর্টার, বিশাল রহমান :- ঠাকুরগাঁওয়ে গম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা বিতরণে কৃষি কর্মকর্তা, তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দূর্নীতি লুটপাটের কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এলাকার কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উঠান বৈঠক , প্রদর্শনী আর বীজ – সার সহায়তা সত্ত্বেও ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতি বছর গম চাষ উদ্বেগজনক হারে কমছে । গত পাঁচ মৌসুমে জেলায় গমের আবাদি জমি কমেছে ২৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর ।
কৃষকেরা বলছেন , কৃষি বিভাগের সার- বীজ প্রণোদনা শুধু কথার কথা। প্রণোদনার জন্য উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা,স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও মেম্বার-চেয়ারম্যানদের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে জুতা ক্ষয় করলেও প্রকৃত কৃষকদের কপালে তা জোটেনা। এর চেয়ে ভুট্টা ও সরিষার মতো ফসল গমের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ দিচ্ছে বলে তাঁরা গম ছেড়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন । কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের তথ্য বলছে , ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল , উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ টন । এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ২০২৪- ২৫ মৌসুমে আবাদ নেমেছে ২১ হাজার ৫০ হেক্টরে ; উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৮৩ হাজার ৬০৮ টন । চলতি ২০২৫-২৬ রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টন । কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতেই দেখা গেছে , এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে , মাত্র ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে ।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন , প্রণোদনায় দূর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,গত মৌসুমের চেয়েও এবার লক্ষ্যমাত্রা অনেক কম ইনশাল্লাহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। এ নিয়ে কথা হয় সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের মধ্য ঝাড়গাও গ্রামের কৃষক নূরুজ্জামান লেমনের সাথে । তিনি বলেন , “ প্রণোদনার নামে লুটপাট চলে এলাকায়। প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে নিজের পছন্দের লোক,টাকার বিনিময়ে উপকারভোগী নির্বাচন করে স্থানীয় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।এছাড়া গমের জন্য লম্বা শীত লাগে । এখন শীত কমে গেছে , আবার বীজ ভালো পাওয়া যায় না , শ্রমিকও পাওয়া যায় না । লাভও কম । ‘ একই এলাকার কৃষক নবাব বলেন , ‘ দালাল ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে প্রণোদনা প্রাপ্তি অসম্ভব। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে প্রণোদনার বীজ ও সার যাদের দেওয়া হয়েছে তাঁরা কেউই গম চাষ করে না।প্রণোদনার বীজ ও সার প্রকাশ্য বিক্রি হয়ে যায়। এছাড়াও ভুট্টায় সেচ কম লাগে , পরিচর্যা কম , খরচ কম । বিঘায় ৪০-৪৫ মণ ফলন হয় । গমে ১৩-১৪ মণ । দামও ভুট্টার ভালো পাই । তাই কয়েক বছর ধরে ভুট্টাতেই ঝুঁকছি । ‘
সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের শফিকুল ইসলাম জানান , তিনি আগে ১০ বিঘা জমিতে গম করতেন । এখন পুরোটাই ভুট্টা । ‘ বিঘায় খরচের দ্বিগুণের বেশি লাভ হয় ভুট্টায় । গমে লোকসানের ভয় থাকে । প্রণোদনার জন্য দিনের পর দিন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান মেম্বারদের পিছনে ঘুরেও তা পাইনি। যাদের দেওয়া হয়েছে তাঁরা টাকার বিনিময়ে তা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়নের কৃষক জিয়াউর রহমান প্রণোদনার বিষয়ে একই অভিযোগ করে বলেন, “যারা প্রণোদনার তালিকায় নাম তুলেছে তাঁরা টাকার বিনিময়ে তা পেয়েছে। আগে পাঁচ – ছয় বিঘা গম করতাম । এখন এক বিঘাও করি না ৷ সব জমিতে ভুট্টা ।
’ জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসিরুল আলম বলেন , প্রণোদনা বিতরণে কোন অনিয়ম ও দূর্ণীতির কথা তিনি জানেন না।তিনি আরও জানান, জেলায় মাছ , গবাদিপশু ও হাঁস – মুরগির খামার বেড়েছে ব্যাপক । প্রাণিখাদ্য তৈরিতে ভূট্টার চাহিদা বেড়েছে । এ কারণে কৃষকেরা ভুট্টার দিকে ঝুঁকছেন । তিনি জানান , ভুট্টার প্রণোদনা এখন বন্ধ করে গমের প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে । চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৫০০ কৃষককে ২৭ হাজার ৫০০ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি করে বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেওয়া হয়েছে । এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও জেলার উপপরিচালক মো . মাজেদুল ইসলামও দূর্নীতির প্রসঙ্গটি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন , ‘ কৃষকেরা লাভের ফসলের দিকে যাচ্ছেন । গমের পরিবর্তে ভুট্টা ও সরিযায় ঝুঁকছেন । তবু গমের আবাদ বাড়াতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ।
প্রণোদনার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে । ‘তবে কৃষকের মুখে একই কথা,প্রণোদনা ভূয়া লোকদের না দিয়ে প্রকৃত চাষীদের দিলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতো। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বিশিষ্ট সমাজ চিন্তক ও কলামিস্ট আজমত রানা বলেন, গম চাষে কৃষকদের বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়ার কথা দাবি করা হলে তা প্রকৃত চাষীদের ভাগ্যে জোটে না।গম চাষে দেশের শীর্ষ তিন জেলার মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের অবস্থান ছিল কিন্তু কতিপয় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের কতিপয় নেতার দূর্নীতির সিন্ডিকেটের কারণে গম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক। স্থানীয় কৃষকদের দাবি দূর্নীতির দুষ্টচক্র ভেঙে প্রকৃত চাষীদের প্রণোদনার দিলে গম চাষের পুরাতন ধারায় ফিরবে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক।
প্রধান সম্পাদক : জুয়েল খন্দকার
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : এস এম রাশেদ হাসান
নির্বাহী সম্পাদক : গাজী ওয়ালিদ আশরাফ সামী
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : ১০/৩, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা-১০০০
হট-লাইন নাম্বার : ০১৯৮৮৬৬৩৭৮২, ০১৯৬৭৯৯৯৭৬৬.
Copyright © 2025 দেশপত্র. All rights reserved.