স্টাফ রিপোর্টার।। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। যেখানে আইন ও ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকার কথা, সেখানেই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য তাণ্ডবে কেঁপে উঠেছে জনমত। আদালতের ভেতরেই এক নাগরিককে ঘিরে ধরে, অশ্লীল গালিগালাজ ও প্রকাশ্য হত্যার হুমকির ঘটনায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনের শাসন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।ভুক্তভোগী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এর উপ-শাখা পানিশাইল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যানেজার মোঃ ফেরদাউছ সিকদার (৩০) ডিএমপি কোতয়ালী থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিতে অভিযোগ করেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে দখলের পায়তারায় একটি সংঘবদ্ধ ও প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে তাকে ভয়ভীতি, নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলের মধ্যে রেখে আসছে। এমনকি সাভারে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে একটি রুমে অবরুদ্ধ করে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তারা ধারাবাহিকতায় আজ ঢাকা জজ কোর্টের আশুলিয়া (আমলির) ৭ম তলার ৭০১ নাম্বার আদালতের বারান্দায় সন্ত্রাসের মঞ্চ!
জিডি সূত্রে জানা যায়, ২৪ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৭ম তলার ৭০১ নম্বর বারান্দায় পরিকল্পিতভাবে মোঃ ফেরদাউছ সিকদারকে একা পেয়ে তাকে ঘিরে ধরে অভিযুক্তরা। সেখানে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে, মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় এবং রাস্তার মধ্যে ফেলে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বলে চালিয়ে দিবেন এমন ভয়ংকর হুমকি দেয়।একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকলেও সন্ত্রাসীরা বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে প্রকাশ্যে দাপট দেখালো।
ডাঃ জাফরুল্লাহর মৃত্যুর পর গণস্বাস্থ্য দখলের অভিযোগ আসামীদের বিরুদ্ধে এবং দখলে নিয়েও ছিলেন। যা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পতনের পর ছাত্রজনতার আন্দোলনে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সামনেই পুনরায় উদ্ধার হয়।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রয়াত ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি চক্র গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দখলের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। সেই সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে হামলার শিকার হন মোঃ ফেরদাউছ সিকদারসহ অসংখ্য কর্মচারী এবং রক্তাক্তও হয়েছে। তখনকার এই হামলাকারীদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে গিয়ে তিনি আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করতে চাইলে, তৎকালীন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মামলা গ্রহণে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন। পরে বাধ্য হয়ে ঢাকা জজ কোর্টে তিনি একটি মারামারি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং- ২৬৬/২৪। এই মামলার আজ- ২৪-১২-২৫ইং তারিখের আসামীরা জামিন শুনানির দিনই হত্যার হুমকি দেয় তাও প্রকাশ্যে!
জানা গেছে উক্ত মামলায় প্রথম আসামি গ্রেফতার হওয়ার জামিনে বের হলে চক্রটি আরও বেপরোয়া হন। এমতাবস্থায় কোর্ট উঠে যাওয়ার পর বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হলে, অভিযোগে ১নং আসামি নজরুল ইসলাম রলিভকে আদালতে রেখে বাকি আসামিদের পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত অস্থায়ী জামিন দেয়।
আসামীদের বিরুদ্ধে গুমের চেষ্টা ও চাঁদা দাবির ভয়াবহ অভিযোগ!
মোঃ ফেরদাউছ সিকদার আরও অভিযোগ করেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দখলের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী চক্রটি তাকে কাশিমপুর থানাধীন পানিশাইল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গুমের চেষ্টা করে। পরে সাভারের একটি ক্যান্টিনে আটকে রেখে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং হাসপাতালের সকল আয়ের টাকা নগদ দিতে চাপ দেওয়া হয়।
মোঃ ফেরদাউছ সিকদার বলেন, আমি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যেকোনো সময় আমাকে হত্যা করা হতে পারে। রাষ্ট্র যদি আমাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে এর দায় কে নেবে? আইনের অভিভাবক যেখানে আদালত, সেখানে নিরাপত্তা কোথায়? সচেতন মহলের প্রশ্ন, যেখানে আদালতই নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষের আশ্রয় কোথায়? আদালত প্রাঙ্গণে এমন প্রকাশ্য সন্ত্রাস রাষ্ট্রের আইনের শাসনের ওপর সরাসরি আঘাত।অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা আরও ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়বে।কোতয়ালী থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জিডি গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন। তবে জনমনে প্রশ্ন,তদন্ত আর আশ্বাসে কি সন্ত্রাস থামবে? নাকি বরাবরের মতো প্রভাবশালীদের ছায়ায় চাপা পড়ে যাবে সত্য?
প্রধান সম্পাদক : জুয়েল খন্দকার
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : এস এম রাশেদ হাসান
নির্বাহী সম্পাদক : গাজী ওয়ালিদ আশরাফ সামী
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : ১০/৩, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা-১০০০
হট-লাইন নাম্বার : ০১৯৮৮৬৬৩৭৮২, ০১৯৬৭৯৯৯৭৬৬.
Copyright © 2025 দেশপত্র. All rights reserved.