নাছির উদ্দিন পল্লবঃ
পিতা-মাতাহীন অসহায় দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম ওরুফে গেদী (৩৬)। দিনে এক বেলা খাবার খেলে আরেক বেলায় খাবার জোটানো দায়। সরকারি ভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা মাত্র ৭৫০ টাকা, যা কয়েক দিনেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগমের মাসের বাকি দিন গুলো কাটে খুবই নিদারুন কষ্টে। তিনি দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ তাকে কোন কাজেও নেন না এবং তিনি নিজেও কোন কাজ করে চলতে পারেন না। ফলে তার নিদারুন কষ্টের যেন শেষ নেই। কোথাও কোথাও থেকে মাঝে মধ্যে খাবার সহায়তা পেলেও এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোন প্রকার চিকিৎসা সহায়তা পাননি তিনি।
বুধবার (৩০ আগষ্ট) দুপুরে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম ওরুফে গেদী ঢাকার দোহার উপজেলার কুসুমহাটি ইউনিয়নের শিলাকোঠা এলাকার ২নং ওয়ার্ডের মৃত হাতেম মোল্লার ও মাতা মৃত আছিয়া দম্পতির ছোট মেয়ে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম ওরুফে গেদী তিনি জন্ম সূত্রে দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ছিলেন না। তিনি জন্মের পাঁচ বছরের সময় দুরারোগ্যে রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তার গরীব অসহায় কৃষক পিতা তার সাধ্যমত চিকিৎসা করালেও তার কোন উন্নতি হয়নি। ফলে তার অসহায় পিতার পক্ষে চিকিৎসা সেবা দীর্ঘস্থায়ী করানো অসম্ভব হওয়ায় থেমে যায় দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম এর চিকিৎসা। সে সময় থেকে তিনি ধীরে ধীরে অন্ধত্ব বরণ করেন। তারপর সেই ৫ বছর বয়স থেকেই তিনি আজ পর্যন্ত সীমাহীন কষ্টের মাঝে চলছেন অবিরাম।
ওই এলাকার মন্টু বেপারী জানান, দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগমের পিতা-মাতা জীবিত থাকাকালীন কোন রকম খেয়ে পড়ে দিন কাটলেও পিতা-মাতার মত্যুর পর সীমাহীন অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। কখনও ভাইয়ের ঘরে আবার কখনও বোনের বাড়ি এভাবেই চলতে থাকে কিছু দিন। কিন্তু যেখানে ভাইদেরই সংসার চালানো দায় আর বোনরা চলে গেছেন অন্যের সংসারে সেখানে দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী বোনকে নিয়ে সংসারে সৃষ্টি হয় নানা সমস্যা। ফলে ধীরে ধীরে গৃহহীন হয়ে পড়েন এই দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। এ সময় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আরজু বেগমের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি কোন এনজিও সংস্থা বা এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে কোন ধর্নাঢ্য ব্যক্তি। পরবর্তিতে কারো কাছে থেকে কোন সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে।
বর্তমানে তিনি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কান্দার বাইলা এলাকার একটি বেসরকারী বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন। সেখানেই কোন রকম দিন কাটে খেয়ে না খেয়ে।
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম ওরুফে গেদী বলেন, আমি দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমার জীবনটাই চলছে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মাধ্যমে। এক বেলা খেতে পারলেও আরেক বেলা থাকতে হয় না খেয়ে। এভাবে একটি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। আমি মেয়ে মানুষ হওয়ায় পড়েছি আরো নানান সমস্যায়। আমি চাইলেই কোথায় যেত পারছি না।
তিনি আরও বলেন, আমি জন্মগত ভাবে অন্ধ ছিলাম না। আমি ছোটবেলায় অসুস্থ হওয়ার পর থেকে চিকিৎসার অভাবে আমি অন্ধত্ব বরণ করেছি। তাই আমার বিশ্বাস যদি কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আমাকে উন্নত চিকিৎসা করাতো তাহলে আমি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতাম। আমি ফিরে পেতাম অন্যসব মানুষের মত স্বাভাবিক জীবন। তাই আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। আমাকে সহযোগিতা করুন। আমি আপনাদের কারো বোনের মত, আমি আপনাদের কারো মেয়ের মত। আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে সাহায্য করুন বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই প্রতিবেদকের কাছে।
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম এর ভাগ্নি রুবিয়া আক্তার বলেন, আমি অন্যের সংসার করি। আমার ছেলে মেয়ে নিয়েই আমি চলতে পারি না। তারপরও যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করি আমার খালার জন্য। কিন্তু তাতে আমার খালার কিছুই হয় না। বর্তমানে একবেলা খেলে আরেক বেলায় না খেয়ে থাকতে হয়। একদিন ভাত মিললে আরেক দিন তরকারি মেলে না। খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটে আমার দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী খালার। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা যা পায়, তা অল্প কয়েক দিনেই শেষ হয়ে যায়। মাসের বাকি দিন বৃদ্ধাশ্রমে খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়।
মেজু বোন মমতা আক্তার বলেন, দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আমার বোনের সহযোগিতায় দেশে সরকারের কাছে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাই। ধনী ব্যক্তিদের সহযোগিতা চাই। আমরা চিকিৎসা সহযোগিতা চাই। চিকিৎসা পেলে আমার বোন আবার দৃষ্টি ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। কারণ আমার বোন জন্মগত ভাবে অন্ধ ছিলো না। তাই আপনারা আমার বোনের চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসুন।
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম ওরুফে গেদীকে সহযোগিতা করতে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন ঢাকা দোহারের শিলাকোঠা তার নিজ বাড়িতে কিংবা বিকাশ বা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পারেন। দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজু বেগম এর ভাগ্নি রুবিয়া এই নাম্বারে বিকাশ একাউন্ট ০১৯৪৮১৪৫৬৬৭ নাম্বারে অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে, রুবিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা।একাউন্ট নাম্বার – ৫০১০১০০০২৫০৬২,চরকুশাই খাঁন বাজার শাখা,দোহার -ঢাকা।