মোঃ নাসির উদ্দিন, স্টাফ রিপোর্টারঃ- স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদের চূড়ান্ত ফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে সকাল ৮টা থেকে মানববন্ধন করছেন তাঁরা।
দেশের ৪৬ টি জেলা থেকে দুই শতাধিক চাকরিপ্রার্থীরা মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন। প্রার্থীরা বলছেন, তাঁদের একটাই দাবি দ্রুত ফল চান তাঁরা। চূড়ান্ত ফলের দাবিতে এর আগেও কয়েকবার মানববন্ধন ও অনশন করেছেন তাঁরা।
কুষ্টিয়া থেকে আসা কানিজ মারিয়া বলেন, চূড়ান্ত ফলের দাবিতে আমরা কয়েক মাস ধরে অধিদপ্তরে ঘুরছি। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও গিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, ফল প্রকাশ করবে অধিদপ্তর। কিন্তু অধিদপ্তর থেকে বলছে, ফল প্রকাশের বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানে। এভাবে আমরা অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঘুরছি কিন্তু ফল পাচ্ছি না।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরেকজন প্রার্থী বলেন, কবে ফল দেবে, সে বিষয়টাও নির্দিষ্টি করে কেউ বলছে না। আমরা আজ সকাল থেকে মানববন্ধন করছি অথচ অধিদপ্তরের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। কয়েকবার কথা বলতে গিয়েও ফেরত আসতে হয়েছে। এভাবে আমরা আর কত দিন ফলাফলের জন্য আন্দোলন করব।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর চূড়ান্ত ফলের দাবিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে অনশন করেন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদের প্রার্থীরা। সে সময়ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ পদটি শুধু নারী প্রার্থীদের জন্য। যাঁদের নিয়োগের পর ১৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠপর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, প্রজননস্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, সাধারণ রোগীসহ অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার কথা।
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া চার বছর ধরে আটকে আছে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হলেও চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হচ্ছে না। এ পদের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক শারীরিক সুস্থতা ও অন্তঃসত্ত্বা নয় মর্মে সনদ জমা দিতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল হবে।
গত ৮ অক্টোবর প্রথম আলোয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের চূড়ান্ত ফল হয়নি, চাকরির শর্তে মা হতে পারছেন না প্রার্থীরা’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর অমানবিক শর্তটি বাতিল করে আদেশ জারি করে অধিদপ্তর।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দীর্ঘ তিন বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে মোট ৪৬টি জেলায় লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী। এর মধ্যে ৭ হাজার ৬২১ জন মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষা নিয়ে আগের নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর নতুন নিয়োগ কমিটি গঠন করে গত ২২ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত পাঁচটি ভাইভা বোর্ডের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হচ্ছে না।