নিজস্ব প্রতিবেদক।।বাংলাদেশকে ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তথ্য সন্ত্রাস চালানো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার (বাবলু) গ্রেপ্তারে বিভিন্ন মহলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। গ্রেপ্তারের আগে এই আ’লীগ নেতা দেশ বিদেশের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে সার্বক্ষণিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারায় বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনসহ নানা ধরণের মিথ্যা অভিযোগে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে আসছিলেন। তিনি লিখেছিলেন- বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করে, ৭১এর পরাজিত হায়েনাদের হাতে তুলে দেওয়ার নীলনকশা আঁকা হচ্ছে। দেশবাসী যদি এখনও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, এইদেশ পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানে রূপ নিতে বেশি দেরি হবে না।
তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে বেপরোয়াভাবে মত্ত থাকা অবশেষে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বলরাম পোদ্দার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মো. সাকিব নামে একজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রমনা মডেল থানার মামলায় গ্রেপ্তার হন। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে কাকরাইলের বাসা থেকে বলরাম পোদ্দারকে গ্রেপ্তার করে রমনা থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য এবং ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। দীর্ঘদিনের মিত্র হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিযোগ উঠে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুকে বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসেন। এই সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মূখ্য ভূমিকায় ছিলেন- আ’লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার।
৬ ডিসেম্বর সামাজিক যোগােযাগ মাধ্যমের একটি প্লাটফর্মে আ’লীগের এই শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বলরাম পোদ্দার সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ক দ্যা হিন্দুর প্রতিবেদন’ ৫ আগস্টের পর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জাতিসংঘের তদন্ত চায় যুক্তরাজ্য’! এরকম শিরোনামের খবরটি বায়ান্না নিউজর এর ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করেন। এর কিছুক্ষণ পর পোস্টকে উদ্দেশ্য করে বরিশালের রাজনীতিক ও গণমাধ্যমকর্মী কাজী মো: জাহাঙ্গীর হোসেন লিখেছেন- তদন্ত হলেই তো বেড়িয়ে আসবে দীর্ঘ ১৭ বছরের হিন্দু নির্যাতনের কাহিনী। দেশবাসীও জানতে আগ্রহী আওয়ামী শাসনামলে ও ৫ আগস্ট পুরো পার্লামেন্ট পালিয়ে যাওয়ার পরে কি পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশবাসী আরও জানতে আগ্রহী যে, ৫ আগষ্টের পরে হিন্দুরা সত্যি সত্যি নির্যাতিত হয়েছে নাকি বর্তমান বিপ্লবী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নির্যাতনের নাটক সাজানো হয়েছে।
এরপর বলরাম পোদ্দার বাবলু লিখেন- প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করে, ৭১এর পরাজিত হায়েনাদের হাতে তুলে দেওয়ার নীলনকশা আঁকা হচ্ছে। দেশবাসী যদি এখনও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, এইদেশ পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানে রূপ নিতে বেশি দেরি হবে না।
বলরাম পোদ্দার এটা লেখার পর গণমাধ্যমকর্মী কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন লিখেন-আওয়ামী সরকারের শাসনামল ও ৫ আগষ্ট পরবর্তী তিন মাসের শাসনামলের তদন্ত হলেই বেড়িয়ে আসবে থলের বেড়াল। বাংলাদেশের মানুষও জানতে চায় স্বাধীনতা পরবর্তী এই তিন মাসে মনে হচ্ছে আমরা একটা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। ভারত শেখ মুজিবকে খাইছে, জিয়াউর রহমানকে খাইছে, শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দিয়ে দেশটাকে গিলে ফেলতে চেয়েছিলো। আল্লাহর রহমতে ছাত্র জনতার আন্দোলনে ভারতের দালাল স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সহ তার এমপি মন্ত্রীরা পালিয়ে যাওয়ায় আজ আমরা গোটা দেশবাসী মুক্তি পেয়েছি। চোর নয়, ডাকাত নয়, লুটেরা নয়, গুম, খুন হত্যাকারী নয়, দেশ আজ বিশ্ব নন্দিত নোবেল জয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস শাসন করছেন। এটাই আজ গোটা বাংলাদেশীদের গর্বের বিষয়।
অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকা সম্পদের মালিক বনে যাওয়া বলরাম পোদ্দার
গণমাধ্যমকর্মী কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন আ’লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার এর পোস্টকে কেন্দ্র করে লিখেছিলেন– বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের/হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সত্যিই নির্যাতনের শিকার হতো তাহলে ১৬ বছর অবৈধ ভোটার বিহীন আওয়ামী সরকারের শাসনামলে নানা দুনীতি ও অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকা ও অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া বলরাম পোদ্দার দাদা আপনি অক্ষত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে উসকানি দিয়ে দেশের বিরাজমান শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র করছেন কিভাবে? আসলে আপনাদের মধ্যে কোনো দেশপ্রেম নেই আছে ভারত প্রেম ও ষড়যন্ত্রের প্রেম। যদি এই দেশটির প্রতি নূণ্যতম দেশপ্রেম থাকতো তাহলে তাহলে এরকম মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে লাখো মা বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম এই বাংলাদেশকে নিয়ে অন্তত আপনার মতো মানুষেরা ষড়যন্ত্র করতেন না। আপনি বলুন তো কি পরিমাণ লুটপাট, দুর্নীতি, গুম খুন, মিথ্যা বানোয়াট মনগড়া মামলা দিয়ে এমনকি মৃত ব্যক্তিক মিথ্যা মামলায় আসামি করে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে বৈদেশিক ঋণের টাকা বিদেশে পাচার করলে একটা দেশের গ্রামের মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, কমিশনার, মেয়র, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রাধানমন্ত্রী সহ এমপি মন্ত্রীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়? এরপরও আপনারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের দিয়ে নানা মিথ্যা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শান্ত দেশটাকে অশান্ত করে তুলছেন। দেশের বিরুদ্ধে এরকম ষড়যন্ত্রকারী আপনারা যারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন দেশের স্বার্থে সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে আপনাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাদী জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়ের উলটো পার্শ্বে হিসাব ভবনের পেছনে রাস্তায় মিছিল করছিলেন। এসময় আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধে দা লাঠি দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপরে লাঠিপেটা ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে। এসময় বাদী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন বাদীর দলীয় নেতাকর্মীরা ও ছাত্রজনতা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে। এ ঘটনায় বাদী মো. সাকিব রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ করিম সাংবাদিকদের বলেন, বলরাম পোদ্দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রমনা থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। বলরামের বিরুদ্ধে মামলার বিষয় তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে বরিশালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত : স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকার পতনের তিন দিন পর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশ নিয়ে ‘তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে যেভাবে মিথ্যাচার চালাচ্ছে ভারতের মিডিয়া