চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে কাতর কেন্দ্রীয় কারাগারের কয়েদি সাহেব আলী। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। কারাগারের ভেতরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে চারদিনেও কানে আসেনি কারা কর্তৃপক্ষের! এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কানেও পৌঁছেনি!
অথচ ডেঙ্গু মশা ‘বাগে’ আনতে না পারলে কারাগারের অবস্থা হবে ভয়াবহ। কারা কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু ঠেকাতে নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা জানালেও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কোনো নড়চড় নেই। তৎপরতা নেই স্বাস্থ্য বিভাগেরও।
কারা সূত্রে জানা গেছে, যৌতুকের টাকার জন্য গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে মারার মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয় সাহেব আলীর। গত বছরের মার্চে আদালত তাকে যাবজ্জীবনের সাজা দেয়। ২০১২ সালে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি আছেন এই কয়েদি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন কিনা জানা নেই কারা কর্তৃপক্ষের।এছাড়া কারাগারে বন্দিদের অনেকে জ্বর কাশিতে আক্রান্ত। কেউ কেউ কয়েকদিন ভোগার পর এমনিতেই সুস্থ হচ্ছেন। হাসপাতাল পর্যন্ত না যাওয়ায় তারা ডেঙ্গু পরীক্ষার আওতায় আসছেন না। আর যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়, তাদের হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কারা হাসপাতাল প্রয়োজনে চমেক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কারাগারের প্রথম রোগী কয়েদি সাহেব আলী।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন খান বলেন, ‘নানান সমস্যা নিয়ে কারাগারের আরও রোগী ভর্তি আছেন হাসপাতালে। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রথম রোগী তিনি। যতটুকু জানি এখন তার শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে আছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত কারাগারের আর কোনো রোগী আমরা পাই নাই।’
এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় কারাগারে সিভিল সার্জন কার্যালয় কিংবা চসিকের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চট্টগ্রাম কারাগারে বিশেষ কার্যক্রম চালাতে তৎকালীন চসিক মেয়রকে চিঠি দেন তৎকালীন সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। কারাগারে বিপুল সংখ্যক কয়েদি ও হাজতির উপস্থিতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিটি মেয়রকে ওই চিঠি দেওয়া হয়। এরপরই কারাগারে ক্রাশ প্রোগাম চালায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সেটিই ছিল কারাগারে চসিকের সর্বশেষ মশক নিধন কার্যক্রম।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এই তথ্যটা জানা নেই। এখনই জানলাম। কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।একই বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছেও এমন কোনো তথ্য নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগোযোগ করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।২৩ সেপ্টেম্বর সরেজমিন চমেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানায় বসে আছেন সাহেব আলী। হাসপাতালের ভর্তি কাগজপত্রে তার বয়স ৬০ লেখা থাকলেও দেখে মনে হবে সত্তোরোর্ধ্ব। ডেঙ্গু ছাড়াও যক্ষাসহ নানান শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত তিনি। কানে শুনতে পান না। এমনকি চোখেও ভালোমতো দেখতে পান না বলেও জানান সাহেব আলীর নিরাপত্তায় দায়িত্বরত কারারক্ষী।এ বিষয়ে কারারক্ষী তানজিমুল ইসলাম বলেন, ‘উনি চোখে তেমন দেখেন না। কানেও শুনেন না। বয়সও হইছে অনেক। আমরা তো উনাকে নিরাপত্তা দিচ্ছি। কিন্তু পরিবারের কেউ থাকলে ভালো হইতো। পরিবারের কারও মোবাইল নম্বর পাচ্ছি না। বিষয়টা কারা কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনকে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। পরে জেলার মো. মাসুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানান।
পরবর্তীতে ডেপুটি জেলার ইব্রাহীম রাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সমযের কাগজেকে বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। আমরা তো সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখি। কিন্তু এটা জানতে হবে। আসলেই জানি না।রোগীর নাম জানালে তিনি বলেন, ‘তার ডেঙ্গু হইছে? কখন ভর্তি হইছে? তার তো অন্য সমস্যা ছিল। এটা মেডিকেল সাইট তো তাই জানি না আমি। আর কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত আছে কিনা তাও জানি না।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই কারা কর্মকর্তা বলেন, ‘রেগুলার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমাদের যতটুকু সম্ভব হচ্ছে মশার স্প্রে করা হচ্ছে। রেগুলারই রোগীদের টেস্ট করা হচ্ছে। যাদের অবস্থা সিরিয়াস হয় তাদেরকে বাইরে (চমেকে) পাঠাই। খুব সিরিয়াস কেস কিন্তু পাইনি। তবে যাদেরই জ্বর দেখা যাচ্ছে তাদেরই ডেঙ্গু টেস্ট করা হচ্ছে। আমাদের হাসপাতালেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’