বরিশাল প্রতিনিধি ॥ বরিশাল নগরীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (সদর গার্লস) সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপন এবং পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান নিয়ে একাধিক আয়োজক কমিটি ও রাজনীতি প্রবেশের অভিযোগ এনে নিজেদের অর্থ ফেরত পেতে শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর । সাবেক কমিটি বলছে আমরা শিক্ষার্থীদের অর্থ ফেরত দিতে প্রস্তুত। গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৯ টায় বরিশাল নগরীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ গণস্বাক্ষর গ্রহণ শুরু হয়ে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চলে।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক নিবন্ধণকৃত একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, শতবর্ষ উদ্যাপন করতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক সাধারণ সভায় প্রফেসর শাহ্ সাজেদাকে আহ্বায়ক ও তানিয়া আনজুমান্দ ববিকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠিত হয়। ২০২৪ সালের প্রথম দিকে শতবর্ষ উদ্যাপন করার লক্ষ্যে দুই মাসব্যাপী অনলাইন ও অফলাইনে সাবেক শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন শুরু হয়। ২ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে ২ হাজার ছয়শত ৩৮ জন সাবেক শিক্ষার্থীকে নিবন্ধনভুক্ত করেন তারা। এরপর ম্যাগাজিনের জন্য তারা লেখা আহ্বান করে। আমরা সে নিয়ম মেনেই ফি প্রদান করে অনলাইনে ফরম পূরণ করি। অনুষ্ঠান ২০২৪ সালের শুরুর দিকে হওয়ার কথা থাকলেও পাল্টা কমিটি হওয়ার কারণে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আমরা এখন আর অনুষ্ঠান চাইনা, আমরা আমাদের টাকা পেতে চাই। ২০০৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাবনাজ রহমান জানান, আমরা অনেক আশা করে চাচ্ছিলাম আমাদের একটি প্রোগ্রাম হোক। কিন্তু ২০২৪ সালে আমাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও তা যেহেতু হয়নি । তাই আমরা আমাদের টাকা ফেরত পেতে আজ আমরা পাঁচশতাধিক শিক্ষার্থী এখানে স্বাক্ষর দিতে আসছি। এখন আমরা আর এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছি না।
সাবেক আয়োজক কমিটির সদস্য ‘সুলাইমা জান্নাত সেফা’ জানান, আমাদের ২০২২ ব্যাচের ছোট বোনেরা এ আয়োজনটা করবার জন্য আমাদের সাথে প্রথম দেখা করে। সে অনুযায়ী আমরা এক বছর কাজ করি এ আয়োজনটার জন্য। কিন্তু ২০২৪ সালের শুরু থেকে শুধু তারিখ পরিবর্তন ছাড়া কিছুই হচ্ছেনা। অনেক শিক্ষার্থী এখন আর এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছেনা । তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থী আজ তাদের টাকা ফেরত পেতে গণস্বাক্ষর করছে। এ গনস্বািক্ষর সংগ্রহ কার্যক্রম মঙ্গলবার পর্যন্ত চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ইসরাত জাহান বলেন, আমরা হচ্ছি এ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। আমরা চাচ্ছিলাম আমাদের সদর গার্লস স্কুলে একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হোক কিন্তু সাবেক আয়োজক কমিটির তারিখের পর তারিখ পরিবর্তন, সাথে বর্তমান রাজনৈতিক পদ পরিবর্তন। যেহেতু আমাদের প্রোগ্রামটি নিয়ে ব্যাপক জল ঘোলা হয়েছে এবং এখন আর সবার-ই সব কিছু মিলিয়ে আগ্রহ নেই এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবার। এখন সেই জন্য ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও অফলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে প্রদান করা দুই হাজার টাকা ফেরত পেতে আজ গণস্বাক্ষর দিয়ে তা কমিটির কাছে জমা দেবার জন্য একত্রিত হয়েছি।
এদিকে শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর শাহ্ সাজেদা’র মুঠফোনে যোগাযোগ করলে এ বিষয় তিনি জানান, আমাদের কমিটি রেজিস্ট্রেশনকৃত ২ হাজার ছয়শত ৩৮ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে। শিক্ষার্থীরা শতবর্ষ উদ্যাপন করতে আগ্রহ দেখিয়েছিলো, তখন তাদের পাশে ছিলাম। এখন তারা তাদের টাকা ফেরত চাইলে আমরাও প্রস্তুত তাদের টাকা ফেরত দিতে। শিক্ষার্থীদের করা অনিয়মের অভিযোগ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি বরগুনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা জলিকে আহ্বায়ক করে ১০৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটির সাথে আমাকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে যে চুক্তি হয়েছিলো তা তারা অমান্য করায় আমরা শিক্ষার্থীদের টাকা তাদের হাতে তুলে দেইনি। আমাদের কমিটি রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীদের টাকা দিতে প্রস্তুত, কিন্তু আমাদের বাধা অনিবন্ধিত গঠিত নতুন কমিটি। সকল টাকা সোনালী ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। এবিষয় অর্থবিষয়ক আহ্বায়ক নাসরিন জানাহান পিউরি’র মুঠফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করলে তা রিসিভ করেন নি। সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা খানম এ বিষয় বলেন, আমার জানামতে শতবর্ষ উদ্যাপন ও পুনর্মিলনী বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠানের পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে আজকে দেখেছি স্কুলের সামনে সাবেক শিক্ষার্থরা নিবন্ধনের টাকা ফেরত পেতে গণস্বাক্ষর গ্রহণ করেছে।